আল-হিজর
الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْآنٍ مُبِينٍ
আলিফ- লাম-রা, এগুলো হচ্ছে আয়াত মহাগ্রন্থ ও সুস্পষ্ট কুরআনের [১]।
رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ
কখনো কখনো কাফিররা আকাংখা করবে যে, তারা যদি মুসলিম হত [১] !
ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
তাদেরকে ছাড়ুন, তারা খেতে থাকুক [১], ভোগ করতে থাকুক এবং আশা তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক [২], অতঃপর অচিরেই তারা জানতে পারবে [৩]।
وَمَا أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَعْلُومٌ
আর আমরা যে জনপদকেই ধ্বংস করেছি তার জন্য ছিল একটি নির্দিষ্ট লিপিবদ্ধ কাল [১]
مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ
কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, বিলম্বিতও করতে পারে না।
وَقَالُوا يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ
আর তারা বলে, ‘হে ঐ ব্যক্তি, যার প্রতি যিকর [১] নাযিল হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ [২]।
لَوْ مَا تَأْتِينَا بِالْمَلَائِكَةِ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
‘তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে আমাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে উপস্থিত করছ না কেন [১]?
مَا نُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوا إِذًا مُنْظَرِينَ
আমরা ফেরেশতাদেরকে যথার্থ কারণ ছাড়া প্রেরণ করি না; আর ( ফেরেশতারা উপস্থিত হলে) তখন তারা আর অবকাশ পেত না [১]।
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক [১]।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ
আর অবশ্যই আপনার আগে আমরা আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।
وَمَا يَأْتِيهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
আর তাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত না।
كَذَٰلِكَ نَسْلُكُهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ
এভাবেই আমরা অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি [১],
لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ ۖ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ
এরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনবে না, আর অবশ্যই গত হয়েছে পূর্ববর্তীদের রীতি [১]।
وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا مِنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ
আর যদি আমরা তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেই অতঃপর তারা তাতে আরোহন করতে থাকে,
لَقَالُوا إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَسْحُورُونَ
তবুও তারা বলবে, আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ
আর অবশ্যই আমরা আকাশের বুরুজসমূহ সৃষ্টি করেছি [১] এবং দর্শকদের জন্য সেগুলোকে সুশোভিত করেছি [২];
وَحَفِظْنَاهَا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ
এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমরা সেগুলোকে সুরক্ষিত করেছি;
إِلَّا مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُبِينٌ
কিন্তু কেউ চুরি করে [১] শুনতে চাইলে [২] প্রদীপ্ত শিখা [৩] তার পশ্চাদ্ধাবন করে।
وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْزُونٍ
আর যমীন, এটাকে আমরা বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; এবং আমরা তাতে প্রত্যেক বস্তু উদগত করেছি সুপরিমিতভাবে [১],
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ
আর আমরা তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য এবং তোমরা যাদের রিযিকদাতা নও তাদের জন্যও [১]।
وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ
আর আমাদের কাছেই আছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার এবং আমরা তা পরিজ্ঞাত পরিমানেই নাযিল করে থাকি [১]।
وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ
আর আমরা বৃষ্টি-গর্ভ বায়ু পাঠাই, তারপর আকাশ হতে পানি নাযিল করে তা তোমাদেরকে পান করতে দেই [১]; অথচ তোমরা নিজেরা তা ভাণ্ডারে জমাকারী নও [২]।
وَإِنَّا لَنَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَنَحْنُ الْوَارِثُونَ
আর আমরাই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমরাই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী
وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَأْخِرِينَ
আর অবশ্যই আমরা তোমাদের মধ্য থেকে যারা অগ্রগামী হয়েছে তাদেরকে জানি এবং অবশ্যই জানি তাদেরকে যারা পশ্চাতে গমনকারী [১]।
وَإِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْ ۚ إِنَّهُ حَكِيمٌ عَلِيمٌ
আর নিশ্চয় আপনার রব তাদেরকে সমবেত করবেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ [১]।
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
আর অবশ্যই আমরা মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কাদার শুস্ক ঠনঠনে কালচে মাটি হতে [১],
وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ
আর এর আগে আমরা সৃষ্টি করেছি জিনদেরকে অতি উষ্ণ [১] নির্ধুম আগুন থেকে।
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয় আমি গন্ধযুক্ত কাদার শুস্ক ঠনঠনে কালচে মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি;
فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
অতঃপর যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার পক্ষ থেকে রূহ সঞ্চার করব [১] তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো [২],
فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ
অতঃপর ফেরেশতাগণ সবাই একত্রে সিজদা করল,
إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ أَنْ يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ
ইবলীস ছাড়া, সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।
قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ
আল্লাহ্ বললেন, ‘হে ইবলীস! তোমার কি হল যে, তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না?’
قَالَ لَمْ أَكُنْ لِأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
সে বলল, ‘আপনি গন্ধযুক্ত কাদার শুস্ক ঠনঠনে কালচে মাটি হতে যে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আমি তাকে সিজদা করার নই।’
قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ
তিনি বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, কারণ নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত;
وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ
আর নিশ্চয় প্রতিদান দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি রইল লা’নত।
قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
সে বলল, হে আমার রব! যেদিন তাদের পুনরুত্থান করা হবে সেদিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন।
قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ
তিনি বললেন, নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের একজন,
إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ
সুনির্দিষ্ট সময় আসার দিন পর্যন্ত।
قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
সে বলল, ‘হে আমার রব! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সে জন্য অবশ্যই আমি যমীনে মানুষের কাছে পাপকাজকে শোভন করে তুলব এবং অবশ্যই আমি তাদের সবাইকে বিপথ গামী করব [১],
إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাগণ ছাড়া [১]।
قَالَ هَٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ
আল্লাহ্ বললেন, এটাই আমার কাছে পৌঁছার সরল পথ।
إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ
বিভ্রান্তদের মধ্যে যে তোমার অনুসরণ করবে সে ছাড়া আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না [১];
وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ
আর নিশ্চয় জাহান্নাম তাদের সবারই প্রতিশ্রুত স্থান,
لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَقْسُومٌ
‘সেটার সাতটি দরজা আছে [১], প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য (শয়তানের অনুসারীদের) নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে [২]।’
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও প্রস্রবণসমূহের মধ্যে।
ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آمِنِينَ
তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা শান্তিতে নিরাপত্তার সাথে এতে প্রবেশ কর [১]।’
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُتَقَابِلِينَ
আর আমরা তাদের অন্তর হতে বিদ্বেষ দূর করব [১]; তারা ভাইয়ের মত পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে [২],
لَا يَمَسُّهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ
সেখানে তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিস্কৃতও হবে না [১]।
نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয় আমিই পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু,
وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ
আর নিশ্চয় আমার শাস্তিই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি!
وَنَبِّئْهُمْ عَنْ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ
আর তাদেরকে বলুন, ইবরাহীমের অতিথিদের কথা,
إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ إِنَّا مِنْكُمْ وَجِلُونَ
যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় আমরা তোমাদের ব্যাপারে শংকিত।
قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ
তারা বলল, ‘ভয় করবেন না, আমরা আপনাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি [১]।’
قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَىٰ أَنْ مَسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ
তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ আমি বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কিসের সুসংবাদ দিচ্ছ [১]?’
قَالُوا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُنْ مِنَ الْقَانِطِينَ
তারা বলল, ‘আমরা সত্য সুসংবাদ দিচ্ছি; কাজেই আপনি হতাশ হবেন না।’
قَالَ وَمَنْ يَقْنَطُ مِنْ رَحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ
তিনি বললেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’
قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ
তিনি বললেন, ‘হে প্রেরিত (ফেরেশতা) গণ! তোমাদের আর বিশেষ কি উদ্দেশ্য আছে?’
قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمٍ مُجْرِمِينَ
তারা বলল, ‘নিশ্চয় আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে---
إِلَّا آلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ
তবে লূতের পরিবারের বিরুদ্ধে নয় [১], আমরা তো অবশ্যই তাদের সবাইকে রক্ষা করব,
إِلَّا امْرَأَتَهُ قَدَّرْنَا ۙ إِنَّهَا لَمِنَ الْغَابِرِينَ
কিন্তু তাঁর স্ত্রীকে নয়; আমরা স্থির করেছি যে, নিশ্চয় সে পিছনে অবস্থানকারীদেরই অন্তর্ভুক্ত।’
فَلَمَّا جَاءَ آلَ لُوطٍ الْمُرْسَلُونَ
অতঃপর ফেরেশতাগণ যখন লূত পরিবারের কাছে আসল,
قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ
তখন লূত বললেন, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক’।
قَالُوا بَلْ جِئْنَاكَ بِمَا كَانُوا فِيهِ يَمْتَرُونَ
তারা বলল, ‘না, তারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা আপনার কাছে তা’ই নিয়ে এসেছি;
وَأَتَيْنَاكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ
আর আমরা আপনার কাছে সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং আবশ্যই আমরা সত্যবাদী;
فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ أَدْبَارَهُمْ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ وَامْضُوا حَيْثُ تُؤْمَرُونَ
কাজেই আপনি রাতের কোন এক সময়ে আপনার পরিবারবর্গকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এবং আপনি তাদের পিছনে চলুন [১]। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পিছনে না তাকায় [২]; তোমাদেরকে যেখানে যেতে বলা হয়েছে তোমরা সেখানে চলে যাও [৩]।’
وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَٰلِكَ الْأَمْرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُصْبِحِينَ
আর আমরা তাকে এ বিষয়ে ফয়সালা জানিয়ে দিলাম যে, নিশ্চয় তাদেরকে ভোরে সমূলে বিনাশ করা হবে।
وَجَاءَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ يَسْتَبْشِرُونَ
আর নগরবাসী উল্লসিত হয়ে উপস্থিত হল।
قَالَ إِنَّ هَٰؤُلَاءِ ضَيْفِي فَلَا تَفْضَحُونِ
তিনি বললেন, নিশ্চয় এরা আমার অতিথি; কাজেই তোমরা আমাকে বেইযযত করো না।
وَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ
আর তোমরা আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আমাকে হেয় করো না।’
قَالُوا أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَالَمِينَ
তারা বলল, আমরা কি দুনিয়াসুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?
قَالَ هَٰؤُلَاءِ بَنَاتِي إِنْ كُنْتُمْ فَاعِلِينَ
লূত বললেন, একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এ কন্যারা রয়েছে [১]।
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
আপনার জীবন [১], নিশ্চয় তারা তাদের নেশায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরছিল।
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ
অতঃপর সূর্যোদয়ের সময় প্রকাণ্ড চীৎকার তাদেরকে পাকড়াও করল;
فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ
তাতে আমরা জনপদকে উল্টিয়ে উপর-নিচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পোড়ামাটির পাথর-কংকর বর্ষন করলাম।
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِلْمُتَوَسِّمِينَ
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ-শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য।
وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٍ مُقِيمٍ
আর নিশ্চয় তা লোক চলাচলের পথের পাশেই বিদ্যমান [১]।
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِلْمُؤْمِنِينَ
নিশ্চয় এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন ।
وَإِنْ كَانَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ لَظَالِمِينَ
আর ‘আইকা’বাসীরা [১] ও তো ছিলো সীমালঙ্ঘনকারী,
فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُبِينٍ
অতঃপর আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম, আর এ জনপদ দু’টিই প্রকাশ্য পথের পাশে অবস্থিত।
وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ
আর অবশ্যই হিজরবাসীরা [১] রাসূলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল;
وَآتَيْنَاهُمْ آيَاتِنَا فَكَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ
আমরা তাদেরকে আমাদের নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল।
وَكَانُوا يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ
আর তারা পাহার কেটে ঘর নির্মাণ করতো নিরাপদে।
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ
অতঃপর ভোরে বিকট চীৎকার তাদেরকে পাকড়াও করল।
فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
কাজেই তারা যা অর্জন করত তা তাদের কোন কাজে আসেনি [১]।
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَإِنَّ السَّاعَةَ لَآتِيَةٌ ۖ فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ
আর আসমান, যমীন ও তাদের মাঝে অবস্থিত কোন কিছুই যথার্থতা ছাড়া সৃষ্টি করিনি [১] এবং নিশ্চয় কিয়ামত আসবেই। কাজেই আপনি পরম সৌজন্যের সাথে ওদেরকে ক্ষমা করুন [২]।
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ
নিশ্চয় আপনার রব, তিনিই মহাস্রষ্টা, মহাজ্ঞানী [১]।
وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ
আর আমরা তো আপনাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কুরআন [১]।
لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ
আমর তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ- বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি আপনি কখনো আপনার দুচোখ প্রসারিত করবেন না [১]। তাদের জন্য আপনি দুঃখ করবেন না [২]; আপনি মুমিনদের জন্য আপনার বাহু নত করুন,
وَقُلْ إِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْمُبِينُ
এবং বলুন, ‘ নিশ্চয় আমিই প্রকাশ্য সতর্ককারী।’
كَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى الْمُقْتَسِمِينَ
যেভাবে আমরা নাযিল করেছিলাম বিভক্তকারীদের উপর [১]
الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ
যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে [১]।
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
কাজেই শপথ আপনার রবের! অবশ্যই আমরা তাদের সবাইকে প্রশ্ন করবই,
عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
সে বিষয়ে, যা তারা আমল করত।
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
অতএব আপনি যে বিষয়ে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন।
إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ
নিশ্চয় আমরা বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে আপনার জন্য যথেষ্ট [১],
الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
যারা আল্লাহ্র সাথে অন্য ইলাহ নির্ধারণ করে। কাজেই শিঘ্রই তারা জানতে পারবে।
وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ
আর অবশ্যই আমরা জানি, তারা যা বলে তাতে আপনার অন্তর সংকুচিত হয়;
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ
কাজেই আপনি আপনার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং আপনি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হোন [১];
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
আর আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত আপনি আপনার রবের ইবাদাত করুন [১]।