আয-যারিয়াত
وَالذَّارِيَاتِ ذَرْوًا
শপথ [১] ধূলিঝঞ্ঝার,
فَالْحَامِلَاتِ وِقْرًا
অতঃপর বোঝাবহনকারী মেঘপুঞ্জের,
فَالْجَارِيَاتِ يُسْرًا
অতঃপর স্বচ্ছন্দগতি নৌযানের,
فَالْمُقَسِّمَاتِ أَمْرًا
অতঃপর নির্দেশ বন্টনকারী ফেরেশতাগণের ---
إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَصَادِقٌ
তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য।
وَإِنَّ الدِّينَ لَوَاقِعٌ
নিশ্চয় প্রতিদান অবশ্যম্ভাবী।
وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْحُبُكِ
শপথ বহু পথবিশিষ্ট আসমানের [১],
إِنَّكُمْ لَفِي قَوْلٍ مُخْتَلِفٍ
নিশ্চয় তোমরা পরস্পর বিরোধী কথায় লিপ্ত [১]।
يُؤْفَكُ عَنْهُ مَنْ أُفِكَ
ফিরিয়ে রাখা হয় তা থেকে যে ফিরে থাকে [১]।
قُتِلَ الْخَرَّاصُونَ
ধ্বংস হোক মিথ্যাচারীরা [১],
الَّذِينَ هُمْ فِي غَمْرَةٍ سَاهُونَ
যারা সন্দেহ-সংশয়ে নিপতিত, উদাসীন !
يَسْأَلُونَ أَيَّانَ يَوْمُ الدِّينِ
তারা জিজ্ঞেসা করে, ‘প্রতিদান দিবস কবে হবে?
يَوْمَ هُمْ عَلَى النَّارِ يُفْتَنُونَ
‘যে দিন তারা আগুনে সাজাপ্রাপ্ত হবে।’
ذُوقُوا فِتْنَتَكُمْ هَٰذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ
বলা হবে ‘তোমারা তোমাদের শাস্তি [১] আস্বাদন কর, তোমারা এ শাস্তিই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলে।’
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়,
آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَٰلِكَ مُحْسِنِينَ
গ্রহণ করবে তা যা তাদের রব তাদেরকে দিবেন; নিশ্চয় ইতোপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মশীল,
كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ
তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায় [১],
وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত [১],
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
আর তাদের ধন–সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের হক [১]।
وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِلْمُوقِنِينَ
আর নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে যমীনে [১],
وَفِي أَنْفُسِكُمْ ۚ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও। তবুও তোমরা কি চক্ষুষ্মান হবে না?
وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ
আর আসমানে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু [১]।
فَوَرَبِّ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّهُ لَحَقٌّ مِثْلَ مَا أَنَّكُمْ تَنْطِقُونَ
অতএব আসমান ও যমীনের রবের শপথ ! নিশ্চয় তোমরা যে কথা বলে থাক তার মতই এটি সত্য [১]।
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ
আপনার কাছে ইবরাহীমের সম্মানীত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি?
إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا ۖ قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ
যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’। উত্তরে তিনি বললেন, ‘সালাম’। এরা তো অপরিচিত লোক [১]।
فَرَاغَ إِلَىٰ أَهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ
অতঃপর ইবরাহীম তার স্ত্রীর কাছে দ্রুত চুপিসারে গেলেন [১] এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজা) নিয়ে আসলেন,
فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ
অতঃপর তিনি তা তাদের সামনে রেখে বললেন, ‘তোমরা কি খাবে না?’
فَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً ۖ قَالُوا لَا تَخَفْ ۖ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ
এতে তাদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হল [১]। তারা বলল, ‘ভীত হবেন না।’ আর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্ৰ সন্তানের সুসংবাদ দিল।
فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ فِي صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ
তখন তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে সম্মুখে আসল এবং তার গাল চাপড়িয়ে বলল, ‘বৃদ্ধা-বন্ধ্যা’ [১] ৷
قَالُوا كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ ۖ إِنَّهُ هُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ
তারা বলল, ‘আপনার রব এরূপই বলেছেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ
ইবরাহীম বললেন, ‘হে প্রেরিত ফেরেশতাগণ ! তোমাদের বিশেষ কাজ [১] কি?’
قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمٍ مُجْرِمِينَ
তার বলল, ‘নিশ্চয় আমারা এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’
لِنُرْسِلَ عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِنْ طِينٍ
‘যাতে তাদের উপর নিক্ষেপ করি মাটির শক্ত ঢেলা,
مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُسْرِفِينَ
‘যা সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত আপনার রবের কাছ থেকে [১]।’
فَأَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيهَا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
অতঃপর সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমরা তাদেরকে বের করে নিয়ে আসলাম।
فَمَا وَجَدْنَا فِيهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
তবে আমরা সেখানে একটি পরিবার ছাড়া আর কোন মুসলিম পাইনি।
وَتَرَكْنَا فِيهَا آيَةً لِلَّذِينَ يَخَافُونَ الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
আর যারা মর্মম্ভদ শাস্তিকে ভয় করে আমরা তাদের জন্য ওখানে একটি নিদর্শন রেখেছি।
وَفِي مُوسَىٰ إِذْ أَرْسَلْنَاهُ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ
আর নিদর্শন রেখেছি মূসার বৃত্তান্তেও, যখন আমরা তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফির’আউনের কাছে পাঠালাম [১],
فَتَوَلَّىٰ بِرُكْنِهِ وَقَالَ سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ
তখন সে ক্ষমতার অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নিল [১] এবং বলল, ‘এ ব্যক্তি হয় এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ।’
فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ وَهُوَ مُلِيمٌ
কাজেই আমরা তাকে ও তার দলবলকে শাস্তি দিলাম এবং ওদের সাগরে নিক্ষেপ করলাম, আর সে ছিল তিরস্কৃত।
وَفِي عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيحَ الْعَقِيمَ
আর নিদর্শন রয়েছে ‘আদের ঘটনাতেও, যখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম অকল্যাণকর বায়ু [১] ;
مَا تَذَرُ مِنْ شَيْءٍ أَتَتْ عَلَيْهِ إِلَّا جَعَلَتْهُ كَالرَّمِيمِ
এটা যা কিছুর উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল তাকেই যেন পরিণত করল চূৰ্ণ-বিচূর্ণ ধ্বংসস্তুপে।
وَفِي ثَمُودَ إِذْ قِيلَ لَهُمْ تَمَتَّعُوا حَتَّىٰ حِينٍ
আরও নিদর্শন রয়েছে সামূদের বৃত্তান্তেও, যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, ‘ভোগ করে নাও একটি নিদৃষ্ট কাল। ’
فَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ وَهُمْ يَنْظُرُونَ
অতঃপর তারা তাদের রবের আদেশ মানতে অহংকার করল; ফলে তাদেরকে পাকড়াও করল বজ্র [১] এবং তারা তা দেখছিল।
فَمَا اسْتَطَاعُوا مِنْ قِيَامٍ وَمَا كَانُوا مُنْتَصِرِينَ
অতঃপর তারা উঠে দাঁড়াতে পারল না এবং প্রতিরোধ করতেও পারল না।
وَقَوْمَ نُوحٍ مِنْ قَبْلُ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ
আর (ধ্বংস করেছিলাম) এদের আগে নূহের সম্প্রদায়কে, নিশ্চয় তারা ছিল ফাসেক সম্প্রদায়।
وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ
আর আসমান আমরা তা নির্মাণ করেছি আমাদের ক্ষমতা বলে [১] এবং আমরা নিশ্চয়ই মহাসম্প্রসারণকারী [২]।
وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ
আর যমীন, আমরা তাকে বিছিয়ে দিয়েছি, অতঃপর কত সুন্দর ব্যবস্থাপনাকারী [১] (আমরা)!
وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আর প্রত্যেক বস্তু আমরা সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায় [১], যাতে তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ কর।
فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ ۖ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ
অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও [১], নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক স্পষ্ট সতর্ককারী [২]।
وَلَا تَجْعَلُوا مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ ۖ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ
আর তোমরা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ্ স্থির করো না ; আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহ প্রেরিত এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
كَذَٰلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ
এভাবে তাদের পূর্ববতীদের কাছে যখনই কোন রাসূল এসেছেন তারাই তাকে বলেছে, ’এ তো এক জাদুকর, না হয় এক উন্মাদ !’
أَتَوَاصَوْا بِهِ ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ
তারা কি একে অপরকে এ মন্ত্রণাই দিয়ে এসেছে? বরং এরা সীমালজয়নকারী সম্প্রদায় [১]।
فَتَوَلَّ عَنْهُمْ فَمَا أَنْتَ بِمَلُومٍ
কাজেই আপনি তাদেরকে উপেক্ষা করুন, এতে আপনি তিরস্কৃত হবেন না।
وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ
আর আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কারণ নিশ্চয় উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে।
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে
مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ
আমি তাদের কাছ থেকে কোন রিযিক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে [১]।
إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ
নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো রিযিকদাতা, প্রবল শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
فَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذَنُوبًا مِثْلَ ذَنُوبِ أَصْحَابِهِمْ فَلَا يَسْتَعْجِلُونِ
সুতরাং যারা যুলুম করেছে তাদের জন্য রয়েছে তাদের সমমতাবলম্বীদের অনুরূপ প্রাপ্য (শাস্তি)। কাজেই তারা এটার জন্য আমার কাছে যেন তাড়াহুড়ো না করে [১]।
فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ يَوْمِهِمُ الَّذِي يُوعَدُونَ
অতএব, যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য দুর্ভোগ সে দিনের, যে দিনের বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।