পথ প্রদর্শন
পথ প্রদর্শন
:
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ

এটা [১] সে কিতাব; যাতে কোন সন্দেহ নেই [২] মুত্তাকীদের জন্য [৩] হেদায়েত,

ফুটনোট

[১] এখানে (ذلك) শব্দের অর্থ - ঐটা, সাধারণতঃ কোন দূরবতী বস্তুকে ইশারা করার জন্য
ব্যবহৃত হয়। এখানে (ذلك) দ্বারা কি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে আলেমগণ থেকে কয়েকটি মত বর্ণিত হয়েছেঃ

১) (ذلك) শব্দের অর্থ তাওরাত ও ইঞ্জিল বুঝানো হয়েছে, তখন তার অর্থ হবেঃ হে মুহাম্মাদ! (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ কিতাব যা আমি তাওরাত ও ইঞ্জিলে উল্লেখ করেছিলাম, তা-ই আপনার উপর নাযিল করেছি। অথবা, হে ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায়! তোমাদেরকে যে কিতাবের ওয়াদা আমি তোমাদের কিতাবে করেছি সেটা এই কিতাব যা আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর নাযিল করেছি।

২) এখানে (ذلك) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এ আয়াতসমূহের পূর্বে মক্কা ও মদীনায় নাযিল কুরআনের অন্যান্য সূরা ও আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা। আর যেহেতু সেগুলো আগেই গত হয়েছে, সেহেতু (ذلك) দ্বারা সম্বোধন শুদ্ধ হয়েছে।

৩) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে কিতাব বলতে ঐ কিতাবকে বুঝিয়েছেন, যা আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন। যা লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত।

৪) এখানে কিতাব দ্বারা ঐ কিতাব উদ্দেশ্য, যাতে আল্লাহ্‌ তা'আলা বান্দার ভাল-মন্দ, রিয্‌ক, আয়ু ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

৫) এখানে ঐ কিতাব বুঝানো হয়েছে যা তিনি নিজে লিখে রেখেছেন তাঁর কাছে আরশের উপর, যেখানে লেখা আছে, “আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রাধান্য পাবে”। [বুখারী: ৭৫৫৩, মুসলিম: ২৭৫১]

৬) (الم) দ্বারা যদি পবিত্র কুরআন বুঝানো হয়ে থাকে, অর্থাৎ (الم) কুরআনের নাম হয়ে থাকে, তাহলে (ذلك الكتاب) দ্বারা (الم) বুঝানো হয়েছে।

৭) এখানে (ذلك) দ্বারা (هذا ) বুঝানো হয়েছে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অর্থাৎ এই কিতাব যার আলোচনা হচ্ছে, বা সামনে আসছে। সুতরাং এর দ্বারা কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে। আর এ শেষোক্ত মতই সবচেয়ে বেশী বিশুদ্ধ। সুতরাং (الكتاب) দ্বারা কুরআন মাজীদকে বোঝানো হয়েছে।


[২] এ আয়াতে উল্লেখিত (ريب) শব্দের অর্থ এমন সন্দেহ যা অস্বস্তিকর। এ আয়াতের বর্ণনায় মুফাসসিরগণ বিভিন্ন মত পোষন করেছেনঃ

১) এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এ কুরআন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে।

২) তোমরা এ কুরআনের মধ্যে কোন সন্দেহ করো না। [ইবনে কাসীর]

৩) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এর অর্থ তোমরা এ কুরআনের মধ্যে কোন সন্দেহে নিপতিত হবে না। অর্থাৎ এর সবকিছু স্পষ্ট।

৪) কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ যদি কিতাব দ্বারা ঐ কিতাব উদ্দেশ্য হয়, যাতে আল্লাহ্ তা'আলা সবকিছুর ভালমন্দ হওয়া লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন, তাহলে (لا ريب) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এতে কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন নেই।

[৩] ‘মুত্তাকীন’ শব্দটি ‘মুত্তাকী’-এর বহুবচন। মুত্তাকী শব্দের মূল ধাতু ‘তাকওয়া’। তাকওয়া হলো, নিরাপদ থাকা, নিরাপত্তা বিধান করা। শরী’আতের পরিভাষায় তাকওয়া হলো, বান্দা যেন আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, আর তা করতে হলে যা করতে হবে তা হলো, তাঁর নির্দেশকে পুরোপুরি মেনে নেয়া, এবং তাঁর নিষেধকৃত বস্তুকে পুরোপুরি ত্যাগ করা। আর মুত্তাকী হলেন, যিনি আল্লাহ্‌র আদেশকে পুরোপুরি মেনে নিয়ে এবং তাঁর নিষেধ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থেকে তাঁর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। [ইবনে কাসীর]

বর্ণিত আছে যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আপনি কি কখনো কাঁটাযুক্ত পথে চলেছেন? তিনি বললেন, অবশ্যই। উবাই বললেন, কিভাবে চলেছেন? উমর বললেন, কাপড় গুটিয়ে অত্যন্ত সাবধানে চলেছি। উবাই বললেন: এটাই হলো, তাকওয়া। [ইবনে কাসীর]

তবে প্রশ্ন হতে পারে যে, মুত্তাকীগণকে কেন হেদায়াত প্রাপ্তির জন্য নির্দিষ্ট করেছেন? এ ব্যাপারে আলেমগণ বলেন, মূলতঃ মুত্তাকীরাই আল্লাহ্‌র কুরআন থেকে হেদায়াত লাভ করতে পারেন, অন্যান্য যারা মুত্তাকী নন তারা হেদায়াত লাভ করতে পারেন না। যদিও কুরআন তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেন। আর পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এ অর্থের উপর প্রমাণবহ। আল্লাহ্‌ বলেন, “নিশ্চয় এ কুরআন হিদায়াত করে সে পথের দিকে যা আকওয়াম তথা সুদৃঢ় এবং সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার”। [সূরা আল-ইসরা: ৯]

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, এ কুরআন তাদের জন্য হিদায়াত যারা হেদায়াত চেনার পর তা গ্রহণ না করার শাস্তির ভয়ে সদা কম্পমান। আর তারা তাঁর কাছ থেকে যা এসেছে তার সত্যায়নের মাধ্যমে রহমতের আশাবাদী। [তাফসীরে ইবনে কাসীর ও আততাফসীরুস সহীহ] তাছাড়া হিদায়াতের কোন শেষ নেই, মুত্তাকীরা সর্বদা আল্লাহ্‌র নাযিল করা হেদায়াতের মুখাপেক্ষী বিধায় হেদায়াতকে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। তবে অন্যান্য আয়াতে কুরআনকে সমস্ত মানবজাতির জন্য হেদায়াতকারী বলে উল্লেখ করেছেন, সেখানে এর অর্থ হলো, হিদায়াতের পথ তাদের দেখাতে পারে যদি তারা তা থেকে হিদায়াত নিতে চায়।

: ১২০
وَلَنْ تَرْضَىٰ عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ

আর ইয়াহুদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন। বলুন নিশ্চয় আল্লাহ্‌র হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত। আর যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান আসার পরও, তবে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আপনার কোন অভিভাবক থাকবে না এবং থাকবে না কোন সাহায্যকারীও।
ফুটনোট

: ১৩৫
وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

আর তারা বলে, ‘ইয়াহুদী বা নাসারা হও, সঠিক পথ পাবে’। বলুন, ‘বরং একনিষ্ঠ হয়ে আমরা ইবরাহীমের মিল্লাত অনুসরণ করব [১] এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’।

ফুটনোট

[১] আয়াতের আরেকটি অনুবাদ হচ্ছে, বরং আমরা ইবরাহীমের মিল্লাতের অনুসরণ করব, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং যিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। দুটো অর্থই এখানে গ্রহণযোগ্য। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর]

: ১৩৭
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا ۖ وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

অতঃপর তোমরা যেরূপ ঈমান এনেছ তারাও যদি সেরূপ ঈমান আনে, তবে নিশ্চয় তারা হেদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা বিরোধিতায় লিপ্ত সুতরাং তাদের বিপক্ষে আপনার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
ফুটনোট

: ১৭০
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۗ أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর’ , তারা বলে ‘না, বরং আমরা অনুসরণ করবো তার, যার উপর আমাদের পিতৃ পুরুষদেরকে পেয়েছি’। যদিও তাদের পিতৃপুরুষরা কিছু বুঝতো না এবং তারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না, তবুও কি [১] ?

ফুটনোট

[১] এ আয়াতের দ্বারা বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষের তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ-অনুসরণের যেমন নিন্দা প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি বৈধ অনুসরণের জন্য কতিপয় শর্ত এবং একটা নীতিও জানা যাচ্ছে। যেমন, দু'টি শব্দে বলা হয়েছে (لَايَعْقِلُوْنَ) এবং (وَلَا يَهْتَدُوْنَ) এতে প্রতীয়মান হয় যে, বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষের আনুগত্য ও অনুসরণ এ জন্য নিষিদ্ধ যে, তাদের মধ্যে না ছিল জ্ঞান-বুদ্ধি, না ছিল কোন আল্লাহ্‌ প্রদত্ত হিদায়াত । হিদায়াত বলতে সে সমস্ত বিধি-বিধানকে বোঝায়, যা পরিষ্কারভাবে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে। আর জ্ঞান-বুদ্ধি বলতে সে সমস্ত বিষয়কে বোঝানো হয়েছে, যা শরীআতের প্রকৃষ্ট ‘নস' বা নির্দেশ থেকে গবেষণা করে বের করা হয়। অতএব, তাদের আনুগত্য ও অনুসরণ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণটি সাব্যস্ত হলো এই যে, তাদের কাছে না আছে আল্লাহ্‌ তা'আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কোন বিধি-বিধান, না আছে তাদের মধ্যে আল্লাহ্ তা'আলার বাণীর পর্যালোচনা-গবেষণা করে তা থেকে বিধি-বিধান বের করে নেয়ার মত কোন যোগ্যতা। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, কোন আলেমের ব্যাপারে এমন নিশ্চিত বিশ্বাস হলে যে, কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞানের সাথে সাথে তার মধ্যে ইজতিহাদ (উদ্ভাবন)-এর যোগ্যতাও রয়েছে, তবে এমন মুজতাহিদ আলেমের আনুগত্যঅনুসরণ করা জায়েয। অবশ্য এ আনুগত্য তার ব্যক্তিগত হুকুম মানার জন্য নয়, বরং আল্লাহ্‌র এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মানার জন্যই হতে হবে। [মা'আরিফুল কুরআন, পরিমার্জিত]

: ১৮৫
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

রমাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে [১]। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে [২]। আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহ্‌র মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

ফুটনোট

[১] এই একটি মাত্র বাক্যে সাওম সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসআলা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (شَهِدَ) শব্দটি (شُهُوْدٌ) থেকে গঠিত। এর অর্থ উপস্থিত ও বর্তমান থাকা। আরবী অভিধানে (الشَّهر) অর্থ মাস। এখানে অর্থ হলো রমাদান মাস। কাজেই বাক্যটির অর্থ দাঁড়াল এই যে, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমাদান মাসে উপস্থিত থাকবে, অর্থাৎ বর্তমান থাকবে, তার উপর রমাদান মাসের সাওম রাখা কর্তব্য"। ইতঃপূর্বে সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া দেয়ার যে সাধারণ অনুমতি ছিল এ বাক্যের দ্বারা তা মনসুখ বা রহিত করে দিয়ে সাওম রাখাকেই ওয়াজিব বা অপরিহার্য কর্তব্য করে দেয়া হয়েছে। রমাদান মাসে উপস্থিত বা বর্তমান থাকার মর্ম হলো রমাদান মাসটিকে এমন অবস্থায় পাওয়া, যাতে সাওম রাখার সামর্থ্য থাকে।

[২] আয়াতে রুগ্ন কিংবা মুসাফিরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে যে, সে তখন সাওম না রেখে বরং সুস্থ হওয়ার পর অথবা সফর শেষ হওয়ার পর ততদিনের সাওম কাযা করে নেবে, এ হুকুমটি যদিও পূর্ববর্তী আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছিল, কিন্তু এ আয়াতে যেহেতু সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া দেয়ার ঐচ্ছিকতাকে রহিত করে দেয়া হয়েছে, কাজেই সন্দেহ হতে পারে যে, হয়ত রুগ্ন কিংবা মুসাফিরের বেলায়ও হুকুমটি রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে তার পুনরোল্লেখ করা হয়েছে। [মাআরিফুল কুরআন]

: ১৮৬
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

আর আমার বান্দীগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে [১]।

ফুটনোট

[১] পূর্ববতী আয়াতগুলোতে রামাদানের হুকুম-আহকাম বর্ণনা করা হয়েছে। তারপর একটি সুদীর্ঘ আয়াতে সাওম ও ইতিকাফের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। এখানে মাঝখানে বর্তমান সংক্ষিপ্ত আয়াতটিকে বান্দাদের অবস্থার প্রতি মহান রব-এর অনুগ্রহ এবং তাদের প্রার্থনা শ্রবণ ও কবুল করার বিষয় আলোচনা করে নির্দেশ পালনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ, সাওম সংক্রান্ত ইবাদাতে অবস্থাবিশেষে অব্যাহতি দান এবং বিভিন্ন সহজতা সত্বেও কিছু কষ্ট বিদ্যমান রয়েছে। এ কষ্টকে সহজ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্‌র বিশেষ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, আমি আমার বান্দাদের সন্নিকটে রয়েছি, যখনই তারা আমার কাছে কোন বিষয়ে দো'আ করে, আমি তাদের সে দোআ কবুল করে নেই এবং তাদের বাসনা পূরণ করে দেই। এমতাবস্থায় আমার হুকুম-আহকাম মেনে চলা বান্দাদেরও একান্ত কর্তব্য। তাতে কিছুটা কষ্ট হলেও তা সহ্য করা উচিত। ইমাম ইবনে কাসীর দো'আর প্রতি উৎসাহ দান সংক্রান্ত এই মধ্যবর্তী বাক্যটির তাৎপর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, এ আয়াতের দ্বারা সাওম রাখার পর দোআ কবুল হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সে জন্যই সাওমের ইফতারের পর দোআর ব্যাপারে বিশেষ তৎপরতা অবলম্বন করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “সিয়াম পালনকারীর দো'আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না অর্থাৎ কবুল হয়ে থাকে। [ইবনে মাজাহ: ১৭৫৩] সে জন্যই আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ইফতারের সময় পরিবার পরিজনকে ডাকতেন এবং দো'আ করতেন। [ইবনে কাসীর]

: ১৯৮
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ ۚ فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ ۖ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ

তোমাদের রব-এর অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই [১]। সুতরাং যখন তোমরা ‘আরাফাত [২] হতে ফিরে আসবে’ [৩] তখন মাশ’আরুল হারামের [৪] কাছে পৌঁছে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করবে এবং তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক সেভাবে তাঁকে স্মরণ করবে। যদিও এর আগে [৫] তোমরা বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।

ফুটনোট

[১] বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, জাহেলিয়াতের যুগে ওকায, মাজান্নাহ ও যুল মাজায নামে তিনটি বাজার ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর হজের সময় সাহাবীরা সেই বাজারগুলোতে ব্যবসা করা গুনাহ বলে মনে করতে থাকলে আল্লাহ্‌ তা'আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন। অর্থাৎ হজের মৌসুমে সেসব স্থানগুলোতে ব্যবসা করা কোনো দোষের কাজ নয়। [বুখারী: ১৭৭০, ২০৯৮]

[২] আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা জিবরীলকে ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের কাছে প্রেরণ করে তাকে হজ করান। তারা আরাফাতে পৌছলে ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম বললেন, (عَرَفْتُ) বা আমি চিনতে পেরেছি। কারণ, জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামকে এর পূর্বেই সেখানে একবার নিয়ে এসেছিলেন। আর সে জন্যই সেটার নাম হয় ‘আরাফাত’। [ইবনে কাসীর]

[৩] আব্দুর রহমান ইবনে ইয়ামুর আদ-দীলী বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘হজ হচ্ছে আরাফাত’। তিনি এ কথা তিনবার বললেন। তারপর বললেন, যে ব্যক্তি সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পূর্বেই আরাফায় আসতে সক্ষম হবে সে হজ পেল। আর মিনা হচ্ছে তিন দিন। সুতরাং যদি কেউ দুইদিনে তাড়াতাড়ি করলো তার কোন পাপ নেই এবং যে ব্যক্তি বিলম্ব করলো তারও কোনো পাপ নেই। ' [আবু দাউদ: ১৯৪৯, তিরমিয়ী: ৮৮৯, ইবনে মাজাহ: ৩০১৫, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩০৯,৩১০]

[৪] এখানে ‘মাশ'আরুল হারাম’ বলে মুযদালফা বোঝানো হয়েছে। কারণ, এ অংশ হারাম এলাকার ভিতরে। [ইবনে কাসীর]

[৫] এখানে ‘এর আগে’ বলে ‘হেদায়াত আসার পূর্বে’ বা ‘কুরআনের পূর্বে’ অথবা ‘রাসূল আসার পূর্বে’ এ তিনটি অর্থই হতে পারে। অর্থগুলো পরস্পর কাছাকাছি। [ইবনে কাসীর]

: ৭৩
وَلَا تُؤْمِنُوا إِلَّا لِمَنْ تَبِعَ دِينَكُمْ قُلْ إِنَّ الْهُدَىٰ هُدَى اللَّهِ أَنْ يُؤْتَىٰ أَحَدٌ مِثْلَ مَا أُوتِيتُمْ أَوْ يُحَاجُّوكُمْ عِنْدَ رَبِّكُمْ ۗ قُلْ إِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

আর যে তোমাদের দ্বীনের অনুসরণ করে তাদেরকে ছাড়া আর কাউকেও বিশ্বাস করো না [১]।’ বলুন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্‌র নির্দেশিত পথই একমাত্র পথ। এটা এ জন্যে যে তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে অনুরূপ আর কাউকেও দেয়া হবে অথবা তোমাদের রবের সামনে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করবে [২]।’ বলুন, ‘নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহ্‌র হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছে তা প্রদান করেন। আর আল্লাহ্‌ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’

ফুটনোট

[১] এটাও কিতাবীরা পরস্পরকে বলে। তারা এর মাধ্যমে শিখিয়ে দিচ্ছে যে, তোমরা কখনও কোন মুসলিমকে বিশ্বাস করে তোমাদের গোপন মনের কথা বলে দিও না। এতে তারা সাবধান হয়ে যাবে। [তাফসীরে ইবন কাসীর]

[২] মুজাহিদ বলেন, অর্থাৎ তাদের এসব কর্মকাণ্ডের মূল কারণ হচ্ছে, ইয়াহূদীরা তাদের ছাড়া অন্যদের মাঝে নবুওয়ত আসবে বা অন্যদের মত তারাও একইভাবে কোন দ্বীনের অনুসারী হবে, এটা সহ্য করতে পারছে না। ফলে হিংসা তাদেরকে ঈমান আনতে বাধা দিচ্ছে। কাতাদা বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা ইয়াহূদীদের সম্বোধন করে বলছেন, যখন আল্লাহ্‌ অন্যদের প্রতি তোমাদের কিতাবের মত কিতাব নাযিল করল এবং তোমাদের নবীর মত নবী অন্যদেরকেও প্রদান করল তখনি তোমরা হিংসা আরম্ভ করলে। [তাবারী]

: ১১৫
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا

আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে আমরা ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস [১]‍!

ফুটনোট

[১] এ আয়াত থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা বের হয়। এক. আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতাকারী জাহান্নামী। দুই. কোন ব্যাপারে হক তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত প্রকাশিত হওয়ার পর সেটার বিরোধিতা করাও জাহান্নামীদের কাজ। তিন. এ উম্মতের ইজমা বা কোন বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছার পর সেটার বিরোধিতা করা অবৈধ। কারণ, তারা পথভ্রষ্টতায় একমত হবে না। মুমিনদের মত ও পথের বিপরীতে চলার কোন সুযোগ নেই।

: ৪৬
وَقَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِمْ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِلْمُتَّقِينَ

আর আমরা তাদের পশ্চাতে মারইয়াম-পুত্র ‘ঈসাকে [১] পাঠিয়েছিলাম, তার সামনে তাওরাত থেকে যা বিদ্যমান রয়েছে তার সত্যতা প্রতিপন্নকারীরূপে। আর আমরা তাকে ইঞ্জীল দিয়েছিলাম, এতে রয়েছে হেদায়াত ও আলো; আর তা ছিল তার সামনে অবশিষ্ট তাওরাতের সত্যতা প্রতিপন্নকারী এবং মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত ও উপদেশস্বরূপ।

ফুটনোট

[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আমি মারইয়াম-পুত্র ঈসার সবচেয়ে বেশী নিকটতম। নবীগণ একে অন্যের বৈমাত্রেয় ভাই; আমার এবং তার মধ্যে কোন নবী নেই।” [বুখারীঃ ৩৪৪২]

: ১০৫
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ۚ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

হে মুমিনগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথ ভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না [১]। আল্লাহ্‌র দিকেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তন; তারপর তোমারা যা করতে তিনি সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতের বাহ্যিক শব্দের দ্বারা বোঝা যায় যে, প্রতিটি মানুষের পক্ষে নিজের ও কর্ম সংশোধনের চিন্তা করাই যথেষ্ট। অন্যরা যা ইচ্ছা করুক, সেদিকে ভ্রক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। অথচ এ বিষয়টি কুরআনের যে সব আয়াতে ‘সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ’ করাকে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য এবং মুসলিম জাতির একটি স্বাতন্ত্র্যমূলক বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার পরিপন্থি হয়ে যায়। এ কারণেই আয়াতটি নাযিল হলে কিছু লোকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের সামনে প্রশ্ন রাখেন এবং তিনি উত্তরে বলেন যে, আয়াতটি ‘সৎকাজে আদেশ দান’-এর পরিপন্থী নয়। তোমরা যদি সৎকাজে আদেশ দান’ পরিত্যাগ কর, তবে অপরাধীদের সাথে তোমাদেরকেও পাকড়াও করা হবে। [ইবন কাসীর; সাদী] আবুবকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এক ভাষণে বলেন, তোমরা আয়াতটি পাঠ করে একে অস্থানে প্রয়োগ করছ। জেনে রাখ, আমি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে শুনেছিঃ যারা কোন পাপকাজ হতে দেখেও তা দমন করতে চেষ্টা করে না, আল্লাহ তা'আলা সত্ত্বরই হয় তো তাদেরকেও অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করে আযাবে নিক্ষেপ করবেন। [আবু দাউদঃ ৪৩৪১, তিরমিযীঃ ৩০৫৮, ইবন মাজাহঃ ৪০১৪] তাই মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, তোমরা স্বীয় কর্তব্য পালন করতে থাক। সৎকাজে আদেশ দান’ও এ কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো করার পরও যদি কেউ পথভ্রষ্ট থেকে যায়, তবে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। [সা‘দী] কুরআনের (اِذَا اهْتَدَيْتُمْ) শব্দে চিন্তা করলে এ তাফসীরের যথার্থতা ফুটে উঠে। কেননা, এর অর্থ এই যে, যখন তোমরা সঠিক পথে চলতে থাকবে, তখন অন্যের পথ ভ্রষ্টতা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এখন একথা সুস্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি সৎকাজে আদেশ দান’-এর কর্তব্যটি বর্জন করে, সে সঠিক পথে চলমান নয়। সা’য়ীদ ইবন মুসাইয়্যাব বলেন, এর অর্থ, যদি সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ কর, তাহলে কেউ পথভ্রষ্ট হলে, তাতে তোমার ক্ষতি নেই, যখন তুমি হিদায়াতপ্রাপ্ত হলে। [ইবন কাসীর]

: ৫৬
قُلْ إِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَعْبُدَ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ ۚ قُلْ لَا أَتَّبِعُ أَهْوَاءَكُمْ ۙ قَدْ ضَلَلْتُ إِذًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُهْتَدِينَ

বলুন, ‘তোমারা আল্লাহ্‌ ছাড়া যাদেরকে ডাক,তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেদ করা হয়েছে।’ বলুন, ‘আমি তোমাদের খেয়াল – খুশীর অনুসরণ করি না; করলে আমি বিপদগামী হব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না।’

ফুটনোট

সপ্তম রুকু’

: ৭১
قُلْ أَنَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُنَا وَلَا يَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلَىٰ أَعْقَابِنَا بَعْدَ إِذْ هَدَانَا اللَّهُ كَالَّذِي اسْتَهْوَتْهُ الشَّيَاطِينُ فِي الْأَرْضِ حَيْرَانَ لَهُ أَصْحَابٌ يَدْعُونَهُ إِلَى الْهُدَى ائْتِنَا ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۖ وَأُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ

বলুন, ‘আল্লাহ্‌ ছাড়া আমারা কি এমন কিছুকে ডাকব , যা আমাদের কোন উপকার কিংবা অপকার করতেও পারে না ? আর আল্লাহ্‌ আমাদেরকে হিদায়াত দেবার পর আমাদেরকে কি আগের অবস্থায় ফিরানো হবে [১] সে ব্যাক্তির মত , যাকে শয়তান যমীনে এমন শক্তভাবে পেয়ে বসেছে যে সে দিশেহারা ? তার রয়েছে কিছু (ঈমানদার) সহচর , তারা তাকে হিদায়াতের প্রতি আহবান করে বলে, ‘আমাদের কাছে আস?’ [২] বলুন, ‘ আল্লাহ হিদায়াতই সঠিক হিদায়াত এবং আমারা আদিষ্ট হয়েছি সৃষতিকূলের রব- এর কাছে আত্নসমর্পণ করতে [৩]।’

ফুটনোট

নবম রুকূ’

[১] অর্থাৎ ঈমানদার হওয়ার পরে কি আমরা কুফরীতে ফিরে যাব? [আইসারুত তাফসীর]

[২] কিন্তু সে ঈমানদার বন্ধুদের এ আহবানে সাড়া দেয় না। [মুয়াসসার]

[৩] এ আয়াত দ্বারা আরো জানা গেল যে, যারা আখেরাতের প্রতি অমনোযোগী হয়ে শুধু
পার্থিব জীবন নিয়ে মগ্ন, তাদের সংসৰ্গও অপরের জন্য মারাত্মক। তাদের সংসর্গে উঠা-বসাকারীরাও পরিণামে তাদের অনুরূপ আযাবে পতিত হবে। পূর্ববতী তিনটি আয়াতের সারমর্ম মুসলিমদেরকে অশুভ পরিবেশ ও খারাপ সংসর্গ থেকে বাচিয়ে রাখা। এটি যে কোন মানুষের জন্যই বিষতৃল্য। কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য উক্তি ছাড়াও চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, অসৎ সমাজ ও মন্দ পরিবেশই মানুষকে কুকর্ম ও অপরাধে লিপ্ত করে। এ পরিবেশে জড়িয়ে পড়ার পর মানুষ প্রথমতঃ বিবেক ও মনের বিরুদ্ধে কুকর্মে লিপ্ত হয়। এরপর আস্তে আস্তে কুকর্ম যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন মন্দের অনুভূতিও লোপ পায়, বরং মন্দকে ভাল এবং ভালকে মন্দ মনে করতে থাকে। যেমন এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘যখন কোন ব্যক্তি প্রথমবার গোনাহ করে, তখন তার কলবে একটি কাল দাগ পড়ে। তারপর যখন তাওবা করে গোনাহের কাজ থেকে বিরত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন তার কলব আবার পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু যদি গোনাহ বাড়িয়ে দেয়, তখন একের পর এক কালো দাগ বাড়াতে থাকে। কুরআনুল কারমে (رَانَ) শব্দ দ্বারা এ অবস্থাকেই ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “কুকর্মের কারণে তাদের অন্তরে মরিচা পড়ে গেছে।" [সূরা আল-মুতাফফিফীন:১৪] [ইবনে মাজাহঃ ৪২৪৪, তিরমিযীঃ ৩৩৩৪, ইমাম আহমাদ, মুসনাদঃ ২/২৯৭] অর্থাৎ ভাল-মন্দ পার্থক্য করার যোগ্যতাই লোপ পেয়ে বসে। চিন্তা করলে বুঝা যায়, অধিকাংশ ভ্রান্ত পরিবেশ ও অসৎ সঙ্গই মানুষকে এ অবস্থায় পৌছায়। এ কারণেই অভিভাবকদের কর্তব্য ছেলে-সন্তানদেরকে এ ধরণের পরিবেশ থেকে বাচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করা।

: ৭৭
فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ

অতঃপর যখন তিনি চাঁদকে সমুজ্জ্বলরূপে উঠতে দেখলেন তখন বললেন , ‘এটা আমার রব।’ যখন সেটাও অস্তমিত হল তখন বলেন, ‘ আমাকে আমার রব হিদায়াত না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের শামিল হব।’
ফুটনোট

: ৮০
وَحَاجَّهُ قَوْمُهُ ۚ قَالَ أَتُحَاجُّونِّي فِي اللَّهِ وَقَدْ هَدَانِ ۚ وَلَا أَخَافُ مَا تُشْرِكُونَ بِهِ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ رَبِّي شَيْئًا ۗ وَسِعَ رَبِّي كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا ۗ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ

আর তাঁর সম্প্রদায় তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হল।তিনি বললেন, ‘তোমারা কি আল্লাহ্‌ সম্বদ্ধে আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো? অথছ তিনি আমাকে হিদায়েত দিয়েছেন। আমার রব অন্য কোন ইচ্ছে না করলে তোমারা যাকে তাঁর শরীক কর তাকে আমি ভয় করি না, আমার রব জ্ঞান দ্বারা সবকিছু পরিব্যাপ্ত করে আছেন, তবে কি তোমারা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’
ফুটনোট

: ৯৭
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

আর তিনিই তোমাদের জন্য তারকামন্ডল সৃষ্টি করেছেন যেন তা দ্বারা তোমারা স্থলের ও সাগরের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও [১]। অবশ্যই আমারা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি [২]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র ছাড়া অন্যান্য নক্ষত্রও আল্লাহ্ তা'আলার অপরিসীম শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এগুলো সৃষ্টি করার পিছনে যে হাজারো রহস্য রয়েছে, তন্মধ্যে একটি এই যে, স্থল ও জলপথে ভ্রমণ করার সময় রাত্রির অন্ধকারে যখন দিক নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন মানুষ এসব নক্ষত্রের সাহায্যে পথ ঠিক করে নিতে পারে। [মুয়াসসার] অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, আজ বৈজ্ঞানিক কলকজার যুগেও মানুষ নক্ষত্রপুঞ্জের পথ প্রদর্শনের প্রতি অমুখাপেক্ষী নয়। এ আয়াতেও মানুষকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, এসব নক্ষত্রও কোন একজন নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিচরণ করছে। এরা স্বীয় অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও কর্মে স্বয়ং-সম্পূর্ণ নয়। যারা শুধু এদের প্রতিই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে এবং নির্মাতার প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, তারা অত্যন্ত সংকীর্ণমনা এবং আত্মপ্রবঞ্চিত।

[২] অর্থাৎ আমি শক্তির প্রমাণাদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি বিজ্ঞজনদের জন্য। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যারা এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও আল্লাহকে চিনে না, তারা বেখবর ও অচেতন। কোন নিদর্শনই তাদের কাজে লাগে না। নবীদের বর্ণনাও তাদের কোন সন্দেহ দূর করতে পারে না। তাদের কাছে এসব বর্ণনা যত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবেই আসুক না কেন, তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। [সাদী]

: ১৪০
قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ قَتَلُوا أَوْلَادَهُمْ سَفَهًا بِغَيْرِ عِلْمٍ وَحَرَّمُوا مَا رَزَقَهُمُ اللَّهُ افْتِرَاءً عَلَى اللَّهِ ۚ قَدْ ضَلُّوا وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ

অবশ্যই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা নির্বুদ্ধিতার জন্য ও অজ্ঞতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করেছে এবং আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যা রটনা করে আল্লাহ্‌ প্রদও জীবিকাকে নিষিদ্ধ গণ্য করেছে।তারা অবশ্যই বিপথগামী হয়েছে এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না [১]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ তারা তাদের পথভ্রষ্টতায় অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল, তাদের কোন কাজেই হিদায়াত নসীব হয় নি। [সা'দী] আর তাদের মধ্যে হিদায়াত পাবার যোগ্যতাও ছিল না। [ফাতহুল কাদীর]

: ১৫৭
أَوْ تَقُولُوا لَوْ أَنَّا أُنْزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّا أَهْدَىٰ مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ ۚ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَّبَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَصَدَفَ عَنْهَا ۗ سَنَجْزِي الَّذِينَ يَصْدِفُونَ عَنْ آيَاتِنَا سُوءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يَصْدِفُونَ

কিংবা যেন তোমরা না বল যে, ‘যদি আমাদের প্রতি কিতাব নাযিল হত, তবে আমরা তো তাদের চেয়ে বেশী হিদায়াত প্রাপ্ত হতাম [১]।’ সুতরাং অবশ্যই তোমাদের কাছে তোমাদের রব-এর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করবে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? যারা আমাদের আয়াতসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সত্যবিমুখিতার জন্য অচিরেই আমরা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দেব।

ফুটনোট

[১] আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বর্ণনা করছেন যে, কুরআন নাযিল করার একটি গুরুত্বপূর্ণ রহস্য হচ্ছে, মক্কার কাফেরদের কোন ওযর-আপত্তি অবশিষ্ট না রাখা। তারা হয়ত বলতে পারত যে, আমাদের প্রতি যদি কোন কিতাব নাযিল করা হতো যেমনিভাবে ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, তবে অবশ্যই আমরা বেশী হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। কুরআন নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের এ কথার সুযোগ আর রাখলেন না। অন্য আয়াতে এসেছে যে, তারা শপথ করে সেটা বলত। কিন্তু যখন তাদের কাছে কিতাব নাযিল করা হলো তখন তাদের জন্য শুধু হঠকারিতাই বৃদ্ধি করল। আল্লাহ বলেন, “আর তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর শপথ করে বলত যে, তাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসলে তারা অন্য সকল জাতির চেয়ে সৎপথের অধিকতর অনুসারী হবে; তারপর যখন এদের কাছে সতর্ককারী আসল তখন তা শুধু তাদের দূরত্বই বৃদ্ধি করল--- যমীনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ এবং কূট ষড়যন্ত্রের কারণে। আর কূট ষড়যন্ত্র তার উদ্যোক্তাদেরকেই পরিবেষ্টন করবে" [সূরা ফাতির:৪২-৪৩] [আদওয়াউল বায়ান] সুদ্দী বলেন, আয়াতের অর্থ, তোমাদের কাছে স্পষ্ট আরবী ভাষায় দলীল-প্রমাণাদি এসেছে, যখন তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের কিতাব পড়তে অক্ষম। আর যখন তোমরা বলেছিলে, আমাদের কাছে কিতাব আসলে তো আমরা তাদের থেকেও বেশী হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। [তাবারী]

: ৩০
فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلَالَةُ ۗ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ

একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন। আর অপরদল,তাদের উপর পথ ভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে [১]। নিশ্চয় তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভিবক-রুপে গ্রহণ করেছিল এবং মনে করত [২] তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতের সমর্থনে আরও আয়াত ও অনেক হাদীস এসেছে। সূরা আত-তাগাবুনের ২নং আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা এ কথাটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এটা তাকদীরের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সমস্ত মানুষকে কাফের ও মুমিন এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। কিন্তু মানুষ জানেনা সে কোনভাগে। সুতরাং তার দায়িত্ব হবে কাজ করে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদীসেও তা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘তোমাদের কেউ কেউ এমন কাজ করে যে, বাহ্য দৃষ্টিতে সে জান্নাতের অধিবাসী অথচ সে জাহান্নামী। আবার তোমাদের কেউ কেউ এমন কাজ করে যে, বাহ্য দৃষ্টিতে মনে হয় সে জাহান্নামী অথচ সে জান্নাতী। কারণ মানুষের সর্বশেষ কাজের উপরই তার হিসাব নিকাশ’। [বুখারীঃ ২৮৯৮, ৪২০২; মুসলিমঃ ১১২; আহমাদ ৫/৩৩৫] অন্য হাদীসে এসেছে, ‘প্রত্যেক বান্দাহ পুনরুখিত হবে সেটার উপর যার উপর তার মৃত্যু হয়েছে’। [মুসলিমঃ২৮৭৮]

[২] আয়াতে আল্লাহ তা'আলা এটা বর্ণনা করেছেন যে, কাফেররা শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়েছে। তাদের এ অভিভাবকত্বের স্বরূপ হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর শরী’আতের বিরোধিতা করে শয়তানের দেয়া মত ও পথের অনুসরণ করে থাকে। তারপরও মনে করে থাকে যে, তারা হিদায়াতের উপর আছে। অন্য আয়াতে যারা এ ধরণের কাজ করবে তাদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। “ বলুন, ‘আমরা কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব কাজে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের? ওরাই তারা, ‘পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকাজই করছে " [সূরা আল-কাহাফ: ১০৩-১০৪] [আদওয়াউল বায়ান] মূলতঃ শরী’আতের বিধি-বিধান সম্পর্কে মূর্খতা ও অজ্ঞতা কোন স্থায়ী ওযর নয়। যদি কেউ ভ্রান্ত পথকে বিশুদ্ধ মনে করে পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে তা অবলম্বন করে, তবে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমার যোগ্য নয়। কেননা, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেককে চেতনা, ইন্দ্রিয় এবং জ্ঞান-বুদ্ধি এ জন্যই দিয়েছেন, যাতে সে তা দ্বারা আসল ও মেকী এবং অশুদ্ধ ও শুদ্ধকে চিনে নেয়। অতঃপর তাকে এ জ্ঞান বুদ্ধির উপরই ছেড়ে দেননি, নবী প্রেরণ করেছেন এবং গ্রন্থ নাযিল করেছেন। এসবের মাধ্যমে শুদ্ধ ও ভ্রান্ত এবং সত্য ও মিথ্যাকে পুরোপুরিভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

: ১৪৬
سَأَصْرِفُ عَنْ آيَاتِيَ الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَإِنْ يَرَوْا كُلَّ آيَةٍ لَا يُؤْمِنُوا بِهَا وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ

যমীনে যারা অন্যায় ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব।আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও সেটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে।এটা এ জন্য যে ,তারা আমাদের নিদর্শনসমূহে নিথ্যারোপ করেছে এবং সে সম্বদ্ধে তারা ছিল গাফেল।
ফুটনোট

: ১৯৮
وَإِنْ تَدْعُوهُمْ إِلَى الْهُدَىٰ لَا يَسْمَعُوا ۖ وَتَرَاهُمْ يَنْظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ

আর যদি আপনি তাদেরকে সৎপথে ডাকেন তবে তারা শুনবে না [১] এবং আপনি দেখতে পাবেন যে, তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে; অথচ তারা দেখে না [২]।

ফুটনোট

[১] অন্যত্রও আল্লাহ্ তা'আলা এ কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না এবং শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না।" [সূরা ফাতের: ১৪]

[২] অর্থাৎ এ উপাস্যদের দিকে তাকালে মনে হবে যেন, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। বস্তুত: তারা তাদের এ নির্জীব চোখ দিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে দেখলেও তারা কিন্তু তোমাদের দেখতে পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। [ইবন কাসীর]

: ২৪
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

বলুন, ‘তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ্‌, তাঁর রাসূল এবং তাঁর (আল্লাহ্‌র) পথে জিহাদ করারা চেয়ে বেশি প্রিয় হয় [১] তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তানেরা, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের আপনগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমার ভালবাস [২], তবে অপেক্ষা কর আল্লাহ্‌ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত। [৩]’ আর আল্লাহ্ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেনা না [৪]।

ফুটনোট

[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে বেচাকেনা কর, গাভীর লেজ ধরে থাক, ক্ষেত-খামার নিয়েই সন্তুষ্ট থাক, আর জিহাদ ছেড়ে দাও, তবে আল্লাহ তোমাদের উপর এমন অপমান চাপিয়ে দিবেন যে, যতক্ষণ তোমরা তোমাদের দ্বীনের দিকে ফিরে না আসবে, ততক্ষণ সে অপমান তোমাদের থেকে তিনি সরাবেন না। [আবু দাউদ: ৩৪৬২]

[২] এখানে সরাসরি সম্বোধন রয়েছে তাদের প্রতি, যারা হিজরত ফরয হওয়াকালে পার্থিব সম্পর্কের মোহে হিজরত করেনি। তবে আয়াতটির সংশ্লিষ্ট শব্দের ব্যাপক অর্থে সকল মুসলিমের প্রতি এ আদেশ রয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসাকে এমন উন্নত স্তরে রাখা ওয়াজিব, যে স্তর অন্য কারো ভালবাসা অতিক্রম করবে না। এ ব্যাপারে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "কোন ব্যক্তি ততক্ষণ মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য সকল লোক থেকে অধিক প্রিয় হই। [বুখারীঃ ১৪, মুসলিমঃ ৪৪] আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কারো সাথে বন্ধুত্ব রেখেছে শুধু আল্লাহর জন্য, শক্রতা রেখেছে শুধু আল্লাহর জন্য, অর্থ ব্যয় করে আল্লাহর জন্য এবং অর্থ ব্যয় থেকে বিরত রয়েছে আল্লাহর জন্য, সে নিজের ঈমানকে পরিপূর্ণ করেছে। [আবু দাউদ: ৪৬৮১; অনুরূপ তিরমিযী ২৫২১] হাদীসের এ বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসাকে অপরাপর ভালবাসার উর্ধ্বে স্থান দেয়া এবং শক্ৰতা ও মিত্রতায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের অনুগত থাকা পূর্ণতর ঈমান লাভের পূর্বশর্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ও শরীআতের হেফাযত এবং এতে ছিদ্র সৃষ্টিকারী লোকদের প্রতিরোধ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে ভালবাসার স্পষ্ট প্রমাণ।

[৩] সূরা আত-তাওবাহর এ আয়াতটি নাযিল হয় মূলতঃ তাদের ব্যাপারে যারা হিজরত ফরয হওয়াকালে মক্কা থেকে হিজরত করেনি। মাতা-পিতা, ভাই-বোন,সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী-পরিবার ও অর্থ-সম্পদের মায়া হিজরতের ফরয আদায়ে এদের বিরত রাখে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেন যে, আপনি তাদেরকে বলে দিনঃ “যদি তোমাদের নিকট তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর, আল্লাহ ও তার রাসূল এবং তার রাহে জিহাদ করা থেকে তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আল্লাহ নাফরমানদিগকে কৃতকার্য করেন না।”

এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলার বিধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার যে কথা আছে, তৎসম্পর্কে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এখানে বিধান’ অর্থে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মক্কা জয়ের আদেশ [তাবারী] বাক্যের মর্ম হল, যারা দুনিয়াবী পরিণতির দিন সমাগত। মক্কা যখন বিজিত হবে আর এ সকল নাফরমানেরা লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবে, তখন দুনিয়াবী সম্পর্ক তাদের কোন কাজে আসবে না। হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এখানে বিধান অর্থ আল্লাহর আযাবের বিধান। যা থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। [কুরতুবী; সা’দী] অর্থাৎ আখেরাতের সম্পর্কের উপর যারা দুনিয়াবী সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়ে হিজরত থেকে বিরত রয়েছে, আল্লাহর আযাব অতি শীঘ্ৰ তাদের গ্রাস করবে। দুনিয়ার মধ্যেই এ আযাব আসতে পারে। অন্যথায় আখেরাতের আযাব তো আছেই। হাদীসে এসেছে, শয়তান বনী আদমের তিন স্থানে বসে পড়ে তাকে এগোতে দেয় না। সে তার ইসলাম গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সে বলতে থাকে তুমি কি তোমার পিতা পিতৃপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করবে? তারপর বনী আদম তার বিরোধিতা করে ইসলাম গ্রহণ করে, তখন সে তার হিজরতের পথে বাঁধ সাধে। সে বলতে থাকে, তুমি কি তোমার সম্পদ ও পরিবার-পরিজন ত্যাগ করবে? তারপর বনী আদম তার বিরোধিতা করে হিজরত করে, তখন সে তার জিহাদের পথে বাঁধ সাধে। সে বলতে থাকে, তুমি কি জিহাদ করবে এবং নিহত হবে? তখন তোমার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাবে, তোমার সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাবে, তারপর বনী আদম তার বিরোধিতা করে জিহাদ করে। এমতাবস্থায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর হক হয়ে যায়।' [নাসায়ী: ৩১৩৪]

[৪] অর্থাৎ যারা হিজরতের আদেশ আসা সত্বেও আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করেছে, উপরোক্ত বস্তুগুলোকে বেশী ভালবেসেছে, দুনিয়াবী সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়ে আত্মীয়স্বজন এবং অর্থ-সম্পদকে বুকে জড়িয়ে বসে আছে, আত্মীয়-স্বজন পরিবেষ্টিত অবস্থায় স্বগৃহে আরাম-আয়েশ ও ভোগের আশা পোষণ করে আছে, জিহাদের আহবান আসার পরও সহায়-সম্পত্তির লোভ করে বসে আছে, তারা ফাসেক ও নাফরমান। আর আল্লাহর রীতি হল, তিনি নাফরমান লোকদের উদ্দেশ্য পূরণ করেন না। তাদেরকে হিদায়াত করেন না। তাদেরকে সফলতা ও সৌভাগ্যের পথে পরিচালিত করেন না। [সা’দী; আইসারুত তাফসীর]

১০ : ৩৫
قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ ۚ قُلِ اللَّهُ يَهْدِي لِلْحَقِّ ۗ أَفَمَنْ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ أَحَقُّ أَنْ يُتَّبَعَ أَمَّنْ لَا يَهِدِّي إِلَّا أَنْ يُهْدَىٰ ۖ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ

বলুন, ‘তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সত্যের পথ নির্দেশ করে?’ বলুন, ‘আল্লাহ্‌ই সত্য পথ নির্দেশ করেন। যিনি সত্যের পথ নির্দেশ করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, না যাকে পথ না দেখালে পথ পায় না সে [১]? সুতরাং তোমাদের কি হয়েছে ? তোমরা কেমন বিচার করছ?’

ফুটনোট

[১] আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’আলা সমস্ত মুশরিককে এবং নবীর শিক্ষা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এমন সকল লোককে জিজ্ঞেস করে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের বন্দেগী করো তাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যার মাধ্যমে তোমরা সত্যের পথনির্দেশনা লাভ করতে পারো? অবশ্যি সবাই জানে, এর জবাব না’ ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি না পারে তবে কেবলমাত্র যিনি পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত কে হিদায়াত দিতে পারেন তিনি হচ্ছেন আল্লাহ। যিনি ব্যতীত কোন হক ইলাহ নেই। তাহলে বান্দা কি তার অনুসরণ করবে যে হকের দিকে পথ দেখাতে পারে, যে অন্ধত্ব থেকে চক্ষুষ্মান করতে পারে, নাকি অনুসরণ করবে তার যে তার অন্ধ ও বোবা হওয়ার কারণে কোন কিছুর দিকেই পথ দেখাতে পারে না? [ইবন কাসীর] এ ব্যাপারটিই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার পিতাকে বলেছিলেন, “হে আমার প্রিয় পিতা! আপনি তার ইবাদাত করেন কেন যে শুনে না, দেখে না এবং আপনার কোন কাজেই আসে না?" [সূরা মারইয়াম: ৪২]

১০ : ৪৩
وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْظُرُ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنْتَ تَهْدِي الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوا لَا يُبْصِرُونَ

আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে কি আপনি অন্ধকে পথ দেখাবেন, তারা না দেখলেও [১]?

ফুটনোট

[১] তাদের এ তাকানোর দ্বারা তারা আপনার কাছে নবুওয়াতের যে দলীল-প্রমাণাদি আছে তা দেখতে পায়, কিন্তু তারা এর দ্বারা উপকৃত হয় না। পক্ষান্তরে মুমিনগণ আপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আপনার সততার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে পারে। তাই আপনার প্রতি সম্মানে তাদের চোখ ভরে যায়। কাফেরগণ আপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেও সম্মানের সাথে দেখে না। [ইবন কাসীর] আর যারা সম্মানের সাথে দেখবে না তাদের হিদায়াত তাওফীক হবে না। [কুরতুবী] আল্লাহ্ তা'আলা অন্য আয়াতে আরও বলেনঃ “তারা যখন আপনাকে দেখে তখন তারা আপনাকে শুধু ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্ররূপে গণ্য করে এবং বলে, এই-ই কি সে, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন? ‘সে তো আমাদেরকে আমাদের দেবতাগণ হতে দূরে সরিয়ে দিত, যদি না আমরা তাদের আনুগত্যে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকতাম। যখন তারা শাস্তি দেখতে পাবে তখন তারা জানবে কে বেশী পথভ্রষ্ট। " [সূরা আল-ফুরকানঃ ৪১-৪২]

১১ : ৯৭
إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاتَّبَعُوا أَمْرَ فِرْعَوْنَ ۖ وَمَا أَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيدٍ

ফির’আউন ও তার নেতৃবৃন্দের কাছে। কিন্তু নেতৃবৃন্দ ফির’আউনের কার্যকলাপের অনুসরণ করছিল। আর ফির’আউনের কার্যকলাপ সঠিক ছিল না।
ফুটনোট

১৩ : ২৭
وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِنْ رَبِّهِ ۗ قُلْ إِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ أَنَابَ

আর যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘তার রবের কাছ থেকে তার কাছে কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন?’ [১] বলুন, ‘আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে বিভ্রান্ত করেন এবং যারা তাঁর অভিমুখী তিনি তাদেরকে তাঁর পথ দেখান [২]।

ফুটনোট

[১] আল্লাহ্ তা’আলা ইচ্ছে করলে তারা যে ধরণের নিদর্শন চাচ্ছে সেটা দিতে পারেন। [ইবন কাসীর] এমনকি হাদীসে এসেছে, ‘যখন মক্কার কাফের কুরাইশরা চাইলো যে, আমাদের জন্য সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করে দিন। আমাদের জন্য ঝর্ণাধারা প্রবাহিত করে দিন। মক্কার পাশ থেকে পাহাড়গুলো সরিয়ে নিয়ে যান। যাতে সেখানে বাগান ও নদী-নালা পূর্ণ হয়ে যায়। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূলের কাছে ওহী পাঠালেন যে, হে মুহাম্মাদ! আপনি চাইলে আমি তাদেরকে তা প্রদান করব। কিন্তু তারপর যদি তারা কুফরি করে তবে তাদেরকে এমন শাস্তি দেব যা আমি সৃষ্টিকুলের কাউকে কোনদিন দেইনি। আর যদি আপনি চান যে, আমি রহমত ও তাওবার দরজা খুলে দেই তবে তা-ই করব। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বরং তাদের জন্য রহমত ও তাওবার দরজা খোলা হোক।’ [মুসনাদে আহমাদ ১/২৪২] [ইবন কাসীর]

সুতরাং নিদর্শন পাওয়াই বড় কথা নয়, হিদায়াত নসীব হওয়াই বড় কথা। তাই তো আল্লাহ্ তাদের জন্য নিদর্শন না দিয়ে রহমত ও তাওবার রাস্তা খোলা রেখেছেন। পরবর্তীতে মক্কাবাসীদের অনেকেই সে রহমতে ধন্য হয়।

[২] অর্থাৎ যে নিজেই আল্লাহ্‌র দিকে রুজু হয় না বরং তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, হিদায়াত গ্রহণ করতে চায় না, তাকে জোর করে সত্য-সঠিক পথ দেখানো আল্লাহ্‌র রীতি নয়। যারা আল্লাহ্‌র পথের সন্ধান করে ফিরছে তারা নিদর্শন দেখতে পাচ্ছে এবং নিদর্শনসমূহ দেখেই তারা সত্য পথের সন্ধান লাভ করছে। তোমাদের কাছে যদি যাবতীয় নিদর্শনও আনা হয় তবুও তোমরা ঈমান আনবে না। [দেখুন, মুয়াসসার; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “নিদর্শনাবলী ও ভীতি প্রদর্শন অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উপকারে আসে না।” [সূরা ইউনুসঃ ১০১]

অন্য আয়াতে এসেছে, “নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে আপনার রবের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গেছে, তারা ঈমান আনবে না, যদিও তাদের কাছে সবগুলো নিদর্শন আসে, এমনকি তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখতে পাবে।” [সূরা ইউনুসঃ ৯৬-৯৭]

আল্লাহ্ আরো বলেনঃ “আমি তাদের কাছে ফিরিশতা পাঠালেও এবং মৃতেরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সামনে হাযির করলেও আল্লাহ্‌র ইচ্ছে না হলে তারা কখনো ঈমান আনবে না; কিন্তু তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।” [সূরা আল-আন’আমঃ ১১১]

১৩ : ৩৩
أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ تُنَبِّئُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَمْ بِظَاهِرٍ مِنَ الْقَوْلِ ۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا عَنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ

তবে কি প্রত্যেক মানুষ যা করে তার যিনি পর্যবেক্ষক [১] (তিনি কি এদের অক্ষম ইলাহগুলোর মত?) অথচ তারা আল্লাহ্‌র বহু শরীক সাব্যস্ত করেছে। বলুন, তাদের পরিচয় দাও। নাকি তোমরা যমীনের মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও যা তিনি জানেন না? নাকি (তোমরা) বাহ্যিক কথা মাত্র জানাচ্ছ? বরং যারা কুফরী করেছে তাদের কাছে তাদের ছলনা [২] শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে ফিরিয়ে রাখা হয়েছে [৩], আর আল্লাহ্‌ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ যিনি স্বয়ং প্রত্যেকটি লোকের অবস্থা জানেন। কোন সৎলোকের সৎকাজ এবং অসৎলোকের অসৎকাজ যার দৃষ্টির আড়ালে নেই। তিনি কি ইবাদতের যোগ্য নাকি তারা যাদেরকে ইবাদত করছে তারা? অথচ এসমস্ত উপাস্যগুলো সম্পূর্ণরূপে অক্ষম। [দেখুন, সা’দী] [এ অর্থে আরো দেখুন সূরা ইউনুসঃ ৬১, সূরা আল-আন’আমঃ ৫৯, সূরা হূদঃ ৬, সূরা আর-রা’দঃ ১০, সূরা ত্বা-হাঃ ৭, সূরা আল-হাদীদঃ ৪]

[২] এখানে শির্ক ও কুফরকে ছলনা বা প্রতারণা বলা হয়েছে। কারণ তাদের এগুলো নিছক ভ্রষ্টতা ও আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যাচার। [বাগভী; ইবন কাসীর] এর মাধ্যমে কিছু লোক নিজেদেরকে ভ্রান্ত মা’বুদদের প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড় করিয়ে আপন আপন স্বার্থোদ্ধারের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাছাড়া শির্ক আসলেই একটি আত্মপ্রতারণা। অথবা তাদের কুফরিকেই এখানে প্রতারণা বলা হয়েছে, কারণ রাসূলের সাথে তাদের প্রতারণা ছিল কুফরি। [কুরতুবী]

[৩] অর্থাৎ তাদের কাছে যখন কুফরি সুশোভিত হলো এবং তাদের কাছে তাদের কর্মকাণ্ড তথা শির্ক ও কুফরি হক বলে প্রতিভাত হলো, তখন তারা সে দিকে মানুষদেরকে আহ্বান জানাতে থাকল। এভাবে তারা মানুষদেরকে রাসূলদের পথে চলা থেকে বিরত রাখল। অথবা আয়াতের অর্থ, যখন তাদের কাছে তারা যা করছে তা সুশোভিত করা হলো তখন এর দ্বারা তাদেরকে সত্য সঠিক পথে আসা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। [ইবন কাসীর]

যেমন কুরআনের অন্যত্র এসেছে, “আর আমরা তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম মন্দ সহচরসমূহ, যারা তাদের সামনে ও পিছনে যা আছে তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখিয়েছিল। আর তাদের উপর শাস্তির বাণী সত্য হয়েছে, তাদের পূর্বে চলে যাওয়া জিন ও মানুষের বিভিন্ন জাতির ন্যায়।” [সূরা ফুসসিলাতঃ ২৫]

১৪ : ২১
وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ ۚ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللَّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ ۖ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَحِيصٍ

আর তারা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে প্রকাশিত হবে [১]। তখন দুর্বলেরা যারা অহংকার করত তাদেরকে বলবে, ‘আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম; এখন তোমরা আল্লাহ্‌র শাস্তি হতে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে [২]?’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই- উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান; আমাদের কোন পালানোর জায়গা নেই। [৩]’

ফুটনোট

[১] মূল শব্দ ‘বারাযা’। ‘বারাযা’ মানে সামনে উন্মুক্ত হওয়া। প্রকাশ হয়ে যাওয়া। [কুরতুবী] অর্থাৎ তারা কবর থেকে উন্মুক্ত হয়ে আল্লাহ্‌র সামনে হাযির হবে। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর] প্রকৃতপক্ষে বান্দা তো সবসময় তার রবের সামনে উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু তারা যেহেতু গোনাহ করার সময় মনে করে যে, আল্লাহ্‌র কাছে সেটা গোপন থাকবে, তাই আল্লাহ্ তাদের সে সন্দেহ অপনোদন করে দিলেন। [ফাতহুল কাদীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে উন্মুক্ত হওয়ার অর্থ, কিয়ামতের দিন নেককার-বদকার সমস্ত সৃষ্টির এক প্রবল প্রতাপশালী আল্লাহ্‌র সামনে উপস্থিত হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। তারা সেখানে এমন এক খোলা ভূমিতে একত্রিত হবে যেখানে কেউ নিজেকে গোপন করার কোন সুযোগ পাবে না। [ইবন কাসীর] এ জন্য অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ “মানুষ উন্মুক্তভাবে উপস্থিত হবে আল্লাহ্‌র সামনে যিনি এক, প্রবল প্রতাপশালী।” [সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮]

[২] এটি এমন সব লোকের জন্য সতর্কবাণী যারা দুনিয়ায় চোখ বন্ধ করে অন্যের পেছনে চলে অথবা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে শক্তিশালী যালেমদের আনুগত্য করে, তাদের কথামত একমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদাত করা থেকে দূরে ছিল, তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেনি, তাদের জানানো হচ্ছে, আজ যারা তোমাদের নেতা হয়ে আছে আগামীকাল এদের কেউই তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র আযাব থেকে সামান্যতম নিস্কৃতিও দিতে পারবে না। কাজেই আজই ভেবে নাও, তোমরা যাদের পেছনে ছুটে চলছো অথবা যাদের হুকুম মেনে চলছো তারা নিজেরাই কোথায় যাচ্ছে এবং তোমাদের কোথায় নিয়ে যাবে।

[৩] আয়াতদৃষ্টে মনে হয়, এ ঝগড়াটি জাহান্নামে প্রবেশের পরে হবে। যেমন, কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ ধরনের বর্ণনা এসেছে। বলা হয়েছে, “যখন যাদের অনুসরণ করা হয়েছে তারা, যারা অনুসরণ করেছে তাদের থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেবে এবং তারা শাস্তি দেখতে পাবে। আর তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, আর যারা অনুসরণ করেছিল তারা বলবে, ‘হায়! যদি একবার আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ হতো তবে আমরাও তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম যেমন তারা আমাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে’। এভাবে আল্লাহ্ তাদের কার্যাবলী তাদেরকে দেখাবেন, তাদের জন্য আক্ষেপস্বরূপ। আর তারা কখনো আগুন থেকে বহির্গমণকারী নয়।” [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৬৬-১৬৭]

আরও এসেছে, “আর যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে তখন দুর্বলেরা যারা অহংকার করেছিল তাদেরকে বলবে, ‘আমরা তো তোমাদের অনুসরণ করেছিলাম সুতরাং তোমরা কি আমাদের থেকে জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ গ্রহণ করবে?’ অহংকারীরা বলবে, ‘নিশ্চয় আমরা সকলেই এতে রয়েছি, নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দাদের বিচার করে ফেলেছেন।” [সূরা গাফিরঃ ৪৭-৪৮]

আরও বলেন, “অবশেষে যখন সবাই তাতে একত্র হবে, তখন তাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের রব! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল; কাজেই এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দিন।’ আল্লাহ্ বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না।’ আর তাদের পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদেরকে বলবে, ‘আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কাজেই তোমরা যা অর্জন করেছিলে, তার জন্য শাস্তি ভোগ কর।” [সূরা আল-আ’রাফঃ ৩৮-৩৯]

আরও এসেছে, “যেদিন তাদের মুখমণ্ডল আগুনে উলট-পালট করা হবে সেদিন তারা বলবে, ‘হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম আর রাসূলকে মানতাম!’ তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নেতা ও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; ‘হে আমাদের রব! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে দিন মহাঅভিসম্পাত।” [সূরা আল-আহযাবঃ ৬৬-৬৮]

কিন্তু বিভিন্ন আয়াতদৃষ্টে মনে হয় যে, হাশরের ময়দানেও তারা ঝগড়া করবে, যেমন কুরআনের অন্যত্র এসেছে, “হায়! আপনি যদি দেখতেন যালিমদেরকে যখন তাদের রবের সামনে দাঁড় করানো হবে তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবে, ‘তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম।’ যারা ক্ষমতাদর্পী ছিল তারা, যাদেরকে দূর্বল মনে করা হত তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে নিবৃত্ত করেছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী।’ যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবে, ‘প্রকৃত পক্ষে তোমরাই তো দিনরাত চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, যখন তোমরা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহ্‌র সাথে কুফরী করি এবং তাঁর জন্য সমকক্ষ (শির্ক) স্থাপন করি।’ আর যখন তারা শাস্তি দেখতে পাবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং যারা কুফরী করেছে আমরা তাদের গলায় শৃংখল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে।” [সূরা সাবাঃ ৩১-৩৩] এ ঝগড়াটি হবে হাশরের মাঠে। [ইবন কাসীর]

১৬ : ১৫
وَأَلْقَىٰ فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا وَسُبُلًا لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

আর তিনি যমীনে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে যমীন তোমাদের নিয়ে হেলে না যায় [১] এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথসমূহ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌছতে পার [২];

ফুটনোট

[১] (رَوَاسِيَ) শব্দটি (رٰاسِيَة) এর বহুবচন। এর অর্থ ভারী পাহাড়। (تَمِيْدَ) শব্দটি (ميد) থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ আন্দোলিত হওয়া এবং অস্থিরভাবে টলমল করা। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা অনেক রহস্যের অধীনে ভূ-মণ্ডলকে নিবিড় ও ভারসাম্যবিহীন উপাদান দ্বারা সৃষ্টি করেননি। তাই এটা কোন দিক দিয়ে ভারী এবং কোন দিক দিয়ে হান্ধা হয়েছে। অন্যথায় এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ছিল, ভূ-পৃষ্ঠের অস্থিরভাবে আন্দোলিত হওয়া। এই অস্থিরতাজনিত নড়াচড়া বন্ধ করা এবং পৃথিবীর উৎপাদনকে ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য আল্লাহ্ তা'আলা পৃথিবীতে পাহাড়ের ওজন স্থাপন করেন- যাতে পৃথিবী অস্থিরভাবে নড়াচড়া করতে না পারে। তাই এখানে (اَنْ تَمِيْدَ) এর পূর্বে (كَرٰاهِيَة) বা (اِنْ) এর পরে (لا) শব্দটি উহ্য ধরে নিয়ে অর্থ করতে হবে। [ফাতহুল কাদীর] এ আয়াত থেকে জানা যায়,

ভূপৃষ্ঠে পর্বত শ্রেণী স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর আবর্তন ও গতি সুষ্ঠ ও সুশৃংখল হয়। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের এ উপকারিতা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাহাড়ের অন্য যে সমস্ত উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌণ। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময় পৃথিবীকে আন্দোলিত হওয়া থেকে রক্ষা করাই ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করার মুখ্য উদ্দেশ্য। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

[২] অর্থাৎ নদ-নদীর সাথে যে পথ তৈরী হয়ে যেতে থাকে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকাসমূহে এসব প্রাকৃতিক পথের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। অবশ্যি সমতল ভূমিতেও এগুলোর গুরুত্ব কম নয়। উপরে বাণিজ্যিক সফরের কথা বলা হয়েছে। তাই এসব সুযোগ-সুবিধার কথা এখানেও সমীচীন মনে হয়েছে, যেগুলো আল্লাহ তা'আলা পথিকদের পথ অতিক্রম ও মন্যিলে-মকসুদে পৌছার জন্য ভূ-মণ্ডল ও নভোমণ্ডলে সৃষ্টি করেছেন। তাই পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে (وَعَلامَاتٍ) অর্থাৎ আমি পৃথিবীতে রাস্তা চেনার জন্য পাহাড়, নদী, বৃক্ষ, দালান-কোঠা ইত্যাদির সাহায্যে অনেক চিহ্ন স্থাপন করেছি। [ইবন কাসীর] বলাবাহুল্য, ভূ-পৃষ্ঠ যদি একটি চিহ্নবিহীন পরিমণ্ডল হতো তবে মানুষ কোন গন্তব্যস্থানে পৌছার জন্য পথিমধ্যে কতই না ঘুরপাক খেত।

১৮ : ১৭
وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَتْ تَزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَتْ تَقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِنْهُ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ ۗ مَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا

আর আপনি দেখতে পেতেন- সূর্য উদয়ের সময় তাদের গুহার ডান পাশে হেলে যায় এবং অস্ত যাওয়ার সময় তাদেরকে অতিক্রম করে বাম পাশ দিয়ে [১] , অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে, এ সবই আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন , সে সৎপথপ্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনো তার জন্য কোন পথনির্দেশকারী অভিভাবক পাবেন না।

ফুটনোট

[১] আয়াতের অর্থ বর্ণনায় দু'টি মত রয়েছে। এক, তারা গুহার এক কোনে এমনভাবে আছে যে, সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছে না। স্বাভাবিক আড়াল তাদেরকে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করছে। কারণ, তাদের গুহার মুখ ছিল উত্তর দিকে। এ কারণে সূর্যের আলো কোন মওসুমেই গুহার মধ্যে পৌঁছুতো না এবং বাহির থেকে কোন পথ অতিক্রমকারী দেখতে পেতো না গুহার মধ্যে কে আছে। দেখুন, ইবন কাসীর]

দুই, তারা একটি প্রশস্ত চত্বরে অবস্থান করা সত্ত্বেও দিনের বেলার আলো সূর্যের উদয় বা অস্ত কোন অবস্থায়ই তাদের কাছে পৌছে না। কেননা, মহান আল্লাহ তাদের সম্মনার্থে এ অলৌকিক ব্যবস্থা করেছেন। প্রশস্ত স্থানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে কোন বাধা না থাকলেও তিনি তার স্পেশাল ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে সূর্যের আলোর তাপ থেকে রক্ষা করেছেন। এ অর্থের সপক্ষে প্রমাণ হলো এর পরে বর্ণিত মহান আল্লাহর বাণী: “এটা তো আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম”। যদি স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা হতো তবে আল্লাহর নিদর্শন বলার প্রয়োজন ছিল না। [ফাতহুল কাদীর] ইবনে আব্বাস বলেন, সূর্যের আলো যদি তাদের গায়ে লাগত। তবে তাদের কাপড় ও শরীর পুড়ে যেতে পারত। [ইবন কাসীর]

১৮ : ৬৬
قَالَ لَهُ مُوسَىٰ هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰ أَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا

মূসা তাকে বললেন, ‘যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন, যা দ্বারা আমি সঠিক পথ পাব, এ শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি [১]?

ফুটনোট

[১] এখানে মূসা 'আলাইহিস সালাম আল্লাহর নবী ও শীর্ষস্থানীয় রাসূল হওয়া সত্ত্বেও খাদির ‘আলাইহিস সালাম-এর কাছে সবিনয় প্রার্থনা করেছিলেন যে, আমি আপনার জ্ঞান শিক্ষা করার জন্য আপনার সাহচর্য কামনা করি। এ থেকে বোঝা গেল যে, ছাত্রকে অবশ্যই উস্তাদের সাথে আদব রক্ষা করতে হবে। [ইবন কাসীর]

১৯ : ৫৮
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ مِنْ ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِنْ ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا ۚ إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَٰنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا ۩

এরাই তারা , নবীদের মধ্যে আল্লাহ্ যাদেরকে অনুগ্রহ করেছেন, আদমের বংশ থেকে এবং যাদেরকে আমরা নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত , আর যাদেরকে আমরা হেদায়াত দিয়েছিলাম এবং মনোনীত করেছিলাম ; তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াত তিলাওয়াত করা হলে তারা লুটিয়ে পড়ত সিজদায় [১] এবং কান্নায় [২]

ফুটনোট

[১] অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “বলুন, “তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর বা বিশ্বাস না কর, যাদেরকে এর আগে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের কাছে যখন এটা পড়া হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে।” তারা বলে, “আমাদের প্রতিপালক পবিত্ৰ, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে। ‘এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ [সূরা আল-ইসরা: ১০৭-১০৯]

[২] এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, কুরআনের আয়াত তেলাওয়াতের সময় কান্নার অবস্থা সৃষ্টি হওয়া প্রশংসনীয় এবং নবীদের সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও সৎকর্মশীলদের থেকে এ ধরনের বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার এ সূরা পড়ে সিজদা করলেন এবং বললেন, সিজদা তো হলো, কিন্তু ক্ৰন্দন কোথায়! [ইবন কাসীরা]

২০ : ১০
إِذْ رَأَىٰ نَارًا فَقَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَعَلِّي آتِيكُمْ مِنْهَا بِقَبَسٍ أَوْ أَجِدُ عَلَى النَّارِ هُدًى

তিনি যখন আগুন দেখলেন তখন তার পরিবারবর্গকে বললেন, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি তো আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারবো অথবা আমি আগুনের কাছে ধারে কোন পথনির্দেশ পাব [১]।

ফুটনোট

[১] মনে হচ্ছে তখন সময়টা ছিল শীতকালের একটি রাত। খুব অন্ধকার একটি রাত। [কুরতুবী] মুসা আলাইহিসসালাম সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ এলাকা অতিক্রম করছিলেন। দূর থেকে একটি আগুন দেখে তিনি মনে করেছিলেন সেখান থেকে কিছু আগুন পাওয়া যাবে যার সাহায্যে পরিবারের লোকজনদের সারারাত গরম রাখার ব্যবস্থা হবে অথবা কমপক্ষে সামনের দিকে অগ্রসর হবার পথের সন্ধান পাওয়া যাবে। এখানে এসেছে যে, তিনি পরিবারকে বলেছিলেন যে, আমি যাচ্ছি। যাতে আমি জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারি। অন্য আয়াতে এসেছে, একখণ্ড জ্বলন্ত কাঠ আনতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পারে। ' [সূরা আল-কাসাস: ২৯] এর দ্বারা বোঝা গেল যে, রাতটি ছিল প্রচণ্ড শীতের। তারপর বলেছেন যে, অথবা আমি পথের সন্ধান পাব। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। যখন আগুন দেখলেন, তখন ভাবলেন, যদি কাউকে পথ দেখানোর মত নাও পাই, সেখান থেকে আগুন নিয়ে আসতে পারব। [ইবন কাসীর] তিনি দুনিয়ার পথের সন্ধান পাওয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন আর পেয়ে গেলেন সেখানে আখেরাতের পথ।

২০ : ৫০
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ

মূসা বললেন, ‘আমাদের রব তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার সৃষ্টি আকৃতি দান করেছেন, তারপর পথনির্দেশ করেছেন [১]।

ফুটনোট

[১] আয়াতের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, তিনি প্রতিটি বস্তুর জোড়া সৃষ্টি করেছেন। দুই. মানুষকে মানুষই বানাচ্ছেন, গাধাকে গাধা, ছাগলকে ছাগল। তিন. তিনি প্রতিটি বস্তুর সুনির্দিষ্ট আকৃতি দিয়েছেন। চার. প্রতিটি সৃষ্টিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তৈরী করেছেন। পাঁচ. প্রতিটি সৃষ্টিকে তার জন্য যা উপযোগী সে রকম সৃষ্টিরূপ দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের জন্য গৃহপালিত জন্তুর কোন সৃষ্টিরূপ দেননি। গৃহপালিত জন্তুকে কুকুরের কোন অবস্থা দেননি। কুকুরকে ছাগলের বৈশিষ্ট্য দেননি। প্রতিটি বস্তুকে তার অনুপাতে বিয়ে ও তার জন্য যা উপযুক্ত সেটার ব্যবস্থা করেছেন। সৃষ্টি, জীবিকা ও বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে কোন কিছুকে অপর কোন কিছুর মত করেননি। [ইবন কাসীর] ছয়. তিনি প্রতিটি বস্তুকেই যেটা তার জন্য ভাল সেটার জ্ঞান দিয়েছেন। তারপর সে ভাল জিনিসটার দিকে কিভাবে যেতে হবে সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] সাত. কোন কোন মুফাসসির বলেন, আয়াতের অর্থ, আল্লাহর বাণী “আর যিনি নির্ধারণ করেন অতঃপর পথনির্দেশ করেন” [সূরা আল-আলা: ৩] এর মত, তখন এর দ্বারা অর্থ হবে, আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর তাকদীর নির্ধারণ করেছেন, তারপর সেটাকে সে তাকদীরের দিকে চলার জন্য পথ দেখান। তিনি কার্যাবলী, আয়ু ও রিযিক লিখে নিয়েছেন। সে হিসেবে সমস্ত সৃষ্টিকুল চলছে। এর ব্যতিক্রম করার সুযোগ কারও নেই। এর থেকে বের হওয়াও কারও পক্ষে সম্ভব নয়। মূসা বললেন, আমাদের রব তো তিনিই, যিনি প্রতিটি সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন, তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং সৃষ্টিকুলকে তাঁর ইচ্ছা অনুসারে চালাচ্ছেন। [ইবন কাসীর]

২০ : ১২২
ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدَىٰ

তারপর তার রব তাকে মনোনীত করলেন [১], অতঃপর তার তাওবা কবুল করলেন ও তাকে পথনির্দেশ করলেন।

ফুটনোট

[১] অৰ্থাৎ শয়তানের মতো আল্লাহর দরবার থেকে বহিষ্কৃত করেন নি। আনুগত্যের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যেখানে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন সেখানে তাকে পড়ে থাকতে দেননি। বরং উঠিয়ে আবার নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন কারণ নিজেদের ভুলের অনুভূতি হবার সাথে সাথেই তারা বলে উঠেছিলেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি এবং যদি আপনি আমাদের মাফ না করেন এবং আমাদের প্রতি করুণা না করেন তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।” [সূরা আল আ'রাফঃ ২৩]

২০ : ১২৩
قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَىٰ

তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়ে একসাথে জান্নাত থেকে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার প্রদর্শিত সৎপথের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না।
ফুটনোট

২১ : ৫১
وَلَقَدْ آتَيْنَا إِبْرَاهِيمَ رُشْدَهُ مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا بِهِ عَالِمِينَ

আর আমরা তো এর আগে ইবরাহিমকে তার শুভবুদ্ধি ও সত্যজ্ঞান দিয়েছিলাম [১] এবং আমরা তার সম্বন্ধে ছিলাম সম্যক পরিজ্ঞাত।

ফুটনোট

পঞ্চম রুকু’

[১] রুশদ এর অর্থ হচ্ছে সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করে সঠিক কথা বা পথ অবলম্বন করা এবং বেঠিক কথা ও পথ থেকে দূরে সরে যাওয়া। যাকে আরবীতে صلاح বলা যায়। [বাগভী] এ অর্থের প্রেক্ষিতে “রুশদ” এর অনুবাদ “সত্যনিষ্ঠা”ও হতে পারে। কিন্তু যেহেতু রুশদ শব্দটি কেবলমাত্র সত্যনিষ্ঠ নয়। বরং এমন সত্যজ্ঞানের ভাব প্রকাশ করে যা সঠিক চিন্তা ও ভারসাম্যপূর্ণ সুষ্ঠ বুদ্ধি ব্যবহারের ফলশ্রুতি, তাই “শুভবুদ্ধি ও সত্যজ্ঞান” এই দুটি শব্দ একত্রে এর অর্থের কাছাকাছি। তাই অনুবাদ করা হয়েছে, “ইবরাহীমকে তার শুভবুদ্ধি ও সত্যজ্ঞান দান করেছিলাম।” [দেখুন, কুরতুবী] এখানে 'তার' বলার অর্থ, যতটুকু তার জন্য এবং তার মত অন্যান্য রাসূলদের জন্য উপযুক্ত ততটুকু আমরা তাকে দান করেছিলাম। [ফাতহুল কাদীর] সুতরাং সে যে সত্যের জ্ঞান ও শুভবুদ্ধি লাভ করেছিল তা আমরাই তাকে দান করেছিলাম। এটা তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ছিল। যা ছিল আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।

২২ :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُنِيرٍ

আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, তাদের না আছে জ্ঞান [১] , না আছে পথনির্দেশ [২], না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব [৩]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ ব্যক্তিগত জ্ঞান, যা সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। [ফাতহুল কাদীর] তবে জ্ঞান বলতে ব্যাপক জ্ঞান বুঝাই যথাৰ্থ। [ফাতহুল কাদীর]

[২] অর্থাৎ এমন জ্ঞান যা কোন যুক্তির মাধ্যমে অর্জিত হয়, অথবা কোন জ্ঞানের অধিকারীর পথনির্দেশনা দানের মাধ্যমে লাভ করা যায়। [ফাতহুল কাদীর]

[৩] অর্থাৎ এমন জ্ঞান, যা আল্লাহর নাযিল করা কিতাব থেকে লাভ করা যায়। এ আয়াতে তৰ্কশাস্ত্রের বিশেষ কয়েকটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। কোন তর্ক শুরুর পূর্বে সে বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এ ধরনের জ্ঞানের তিনটি উৎস থাকে। এক, পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান। যে সমস্ত কাফের ও মুশরিক আল্লাহ সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডা করছে তারা যদি দাবী করে যে, আমরা যা বলছি অর্থাৎ কেয়ামত সংঘটিত না হওয়া, পুনরুত্থান না ঘটা, একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে বাধ্য না হওয়া আমাদের সরাসরি পর্যবেক্ষণ বা অভিজ্ঞতার ফল। তবে তারা যেন তা পেশ করে। কিন্তু তারা তা কখনো পেশ করতে পারবে না। বরং অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ তাদের দাবীর বিপরীতে আল্লাহর যাবতীয় ওয়াদাকে সত্য বলে প্রমাণ করছে। দুই, দ্বিতীয় যে ধরনের জ্ঞান থাকলে তর্ক করা যায় তা হলো, গ্রহণযোগ্য যুক্তি বা কোন জ্ঞানের অধিকারীর পথনির্দেশ প্রাপ্ত হলে। কাফের ও মুশরিকরা যারা তাওহীদ বা আখেরাত সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত ছিল তারা তাদের মতের সমর্থনে এ ধরনের কিছুও পেশ করতে ব্যর্থ ছিল। তিন, তৃতীয় যে ধরনের প্রমাণ যুক্তি-তর্কে পেশ করা হয় তা হলো, পূর্ববর্তী কোন কিতাবলব্ধ জ্ঞান। কাফের মুশরিকদের তাওহীদ ও আখেরাত বিরোধী কর্মকাণ্ডের স্বপক্ষে পূর্ববর্তী গ্রন্থ থেকেও কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। মোটকথা: তাদের তর্কের সপক্ষে কোন সুস্থ বিবেকের প্রমাণ যেমন নেই, তেমনি সহীহ ও স্পষ্টভাষী কোন কিতাব বা নবী-রাসূলদের পেশকৃত জ্ঞানও নেই। তারা শুধু মত ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে। [ইবন কাসীর]

২২ :
ثَانِيَ عِطْفِهِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۖ لَهُ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ ۖ وَنُذِيقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَذَابَ الْحَرِيقِ

সে বিতণ্ডা করে অহংকারে ঘাড় বাঁকিয়ে [১] লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য [২]। তার জন্য লাঞ্চনা আছে দুনিয়াতে এবং কেয়ামতের দিনে আমরা তাকে আস্বাদন করার দহন যন্ত্রণা।

ফুটনোট

[১] عطف শব্দের অর্থ পার্শ্ব। [ফাতহুল কাদীর]। এখানে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বোঝানো হয়েছে। এর তিনটি অবস্থা রয়েছেঃ এক, মুর্খতাপ্রসূত জিদ ও হঠকারিতা। দুই, অহংকার ও আত্মম্ভরিতা। তিন, যে ব্যক্তি বুঝায় ও উপদেশ দান করে তার কথায় কৰ্ণপাত না করা। এখানে সব প্রকারই উদ্দেশ্য হতে পারে। অর্থাৎ হকের দিকে আহবান করলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ঘাড় বাঁকিয়ে চলে যায়, তাকে যে হকের প্রতি আহবান জানানো হচ্ছে অহংকারবশত: তা থেকে বিমুখ হয়। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তাদেরকে যখন বলা হয়। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে আস, তখন মুনাফিকদেরকে আপনি আপনার কাছ থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবেন।” [সূরা আন-নিসা: ৬১] [ইবন কাসীর] কুরতুবী বলেন, তর্কের সময় সে হক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তার কথা-বার্তা ও দলীল-প্রমাণাদির মধ্যে গভীর দৃষ্টি দেয়া থেকেও বিরত থাকে। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “আর যখন তার কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন সে অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নেয় যেন সে এটা শুনতে পায়নি”। [সূরা লুকমান: ৭] অন্যত্র এসেছে, “আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “তোমরা আস, আল্লাহর রাসূল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।’ তখন তারা মাথা ফিরিয়ে নেয়”। [সূরা আল-মুনাফিকূন: ৫] আরও এসেছে, “আর আমরা যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। ” [সূরা আল-ইসরা: ৮৩] অনুরূপ অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “তারপর সে তার পরিবার পরিজনের কাছে চলে গিয়েছিল অহংকার করে” [সূরা আল-কিয়ামাহ: ৩৩]

[২] অর্থাৎ তারা শুধু নিজেরাই পথভ্ৰষ্ট নয় বরং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। [ফাতহুল কাদীর]। এখানে আরেক অর্থ এও হতে পারে যে, সে অন্যকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা না করলেও তার কর্মকাণ্ডের ফলাফল তা-ই দাঁড়ায়। [ইবন কাসীর]

২৫ : ৩১
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ ۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيًا وَنَصِيرًا

আল্লাহ্‌ বলেন, ‘আর এভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের থেকে শত্রু বানিয়ে থাকি। আর আপনার রবই পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারীরূপে যথেষ্ট।’
ফুটনোট

২৬ : ৬২
قَالَ كَلَّا ۖ إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ

মূসা বললেন, ‘কখনই নয়! আমার সঙ্গে আছেন আমার রব [১]; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন।’

ফুটনোট

[১] পশ্চাদ্ধাবনকারী ফির‘আউনী সৈন্য বাহিনী যখন তাদের সামনে এসে যায়, তখন সমগ্র বনী ইসরাঈল চিৎকার করে উঠল, হায়! আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম! আর ধরা পড়ার মধ্যে সন্দেহ ও দেরীই বা কি ছিল, পশ্চাতে অতিবিক্রম সেনাবাহিনী এবং সম্মুখে সমুদ্র-অন্তরায়। এই পরিস্থিতি মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এরও অগোচরে ছিল না। কিন্তু তিনি দৃঢ়তার হিমালয় হয়ে আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তখনো সজোরে বলেনঃ كَلاَّ আমরা তো ধরা পড়তে পারি না।

إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ

আমার সাথে আমার পালনকর্তা আছেন। তিনি আমাদের পথ বলে দেবেন। [দেখুন-কুরতুবী]

২৮ : ৪৩
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ مِنْ بَعْدِ مَا أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ الْأُولَىٰ بَصَائِرَ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

আর অবশ্যই পূর্ববর্তী বহু প্ৰজন্মকে বিনাশ করার পর [১] আমরা মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, মানবজাতির জন্য জ্ঞান-বর্তিকা; পথনির্দেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ; যাতে তারা উপদেশ গ্ৰহণ করে।

ফুটনোট

[১] ‘পূর্ববর্তী বহু প্রজন্ম’ বলে নূহ, হূদ, সালেহ আলাইহিমুসসালামের সম্প্রদায়সমূহকে বোঝানো হয়েছে। তারা মূসা আলাইহিসসালামের পূর্বে অবাধ্যতার কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলো যেমনিভাবে পূর্বের নবীদের শিক্ষাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অশুভ পরিণাম ভোগ করেছিল তেমনিভাবে ফির‘আউন ও তার সৈন্যরা সে একই ধরনের পরিণতি দেখেছিল। তার পরে মূসা আলাইহিস সালামকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, যাতে মানব জাতির একটি নব যুগের সূচনা হয়। এরপর থেকে আর কোন সম্প্রদায়ের সকলকে একত্রে আযাব দিয়ে আল্লাহ্‌ তা‘আলা ধ্বংস করেননি। [ইবন কাসীর]

بصاىٔر শব্দটি بصيرة এর বহুবচন। এর শাব্দিক অর্থ জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি। এখানে উদ্দেশ্য সেই জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ বস্তুর স্বরূপ দেখতে পারে, হক জানতে পারে এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারে। যা অনুসরণ করলে মানুষ হেদায়াত পেতে পারে। পথভ্রষ্টতা থেকে নিজেদেরকে উদ্ধার করতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] এখানে ناس বলে মূসা আলাইহিসসালামের উম্মতদের বোঝানো হয়েছে। কারণ; তাওরাত তাদের জন্য আলোকবর্তিকাস্বরূপ ছিল। আমাদের নবীর উপর কুরআন নাযিল হওয়ার পর সে আলোকবর্তিকার পরিবর্তে অন্য আলোকবর্তিকা এসে যাওয়ায় পূর্বেরটা রহিত হয়ে গেছে। এখন আর তা থেকে হেদায়াত নেওয়ার দরকার নেই।

২৮ : ৫০
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

তারপর তারা যদি আপনার ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবেন তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে। আর আল্লাহ্‌র পথ নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যাক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে বেশী বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ্‌ তো যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।
ফুটনোট

৩১ : ২০
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً ۗ وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُنِيرٍ

তোমরা কি দেখ না, নিশ্চয় আল্লাহ্ আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের কল্যানে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন [১]? আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ কোন জ্ঞান, কোন পথনির্দেশ বা কোন দীপ্তিমান কিতাব ছাড়াই আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের উপর তাঁর প্রকাশ্য-অপ্ৰকাশ্য সকল প্রকারের নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। প্রকাশ্য নেয়ামত বলতে সেসব নেয়ামতকেই বোঝায়, যা মানুষ তার পঞ্চেন্দ্ৰিয়ের সাহায্যে অনুধাবন করতে পারে। যেমন, মনোরম আকৃতি, মানুষের সুঠাম ও সংবদ্ধ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং প্রত্যেক অংগ এমন সুসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তৈরী করা যেন তা মানুষের কাজে সর্বাধিক সহায়কও হয় অথচ আকৃতি-প্রকৃতিতেও কোন প্রকারের বিকৃতি না ঘটায়। অনুরূপভাবে জীবিকা, ধন-সম্পদ, জীবনযাপনের মাধ্যমসমূহ, সুস্থতা ও কুশলাবস্থা—এসবই ইন্দ্ৰিয়গ্রাহ্য নেয়ামত ও অনুকম্পাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। তদ্রুপ দ্বীন ইসলামকে সহজ ও অনায়াসলব্ধ করে দেয়া, আল্লাহ-রাসূলের অনুসরণ ও আনুগত্য প্রদর্শনের তওফীক প্ৰদান, অন্যান্য দ্বীনের উপর ইসলামের বিজয় ও প্রভাবশীলতা এবং শক্ৰদের মোকাবেলায় মুসলিমদের প্রতি সাহায্য ও সহায়তা- এসবই প্রকাশ্য নেয়ামতসমূহের পর্যায়ভুক্ত। আর গোপনীয় নেয়ামত সেগুলো, যা মানব হৃদয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত-যথা ঈমান, আল্লাহর পরিচয় লাভ এবং জ্ঞান-বুদ্ধি, সচ্চরিত্র, পাপসমূহ গোপন করা ও অপরাধসমূহের ত্বরিৎ শাস্তি আরোপিত না হওয়া ইত্যাদি। অথবা যেসব নেয়ামত মানুষ জানে না এবং অনুভবও করে না সেগুলো গোপন নিয়ামত। মানুষের নিজের শরীরে এবং তার বাইরে দুনিয়ায় তার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে এমন অগণিত ও অসংখ্য জিনিস রয়েছে কিন্তু মানুষ জানেও না যে, তার স্রষ্টা তার হেফাযত ও সংরক্ষণের জন্য, তাকে জীবিকা দান করার জন্য, তার বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধনের জন্য এবং তার কল্যাণার্থে কত রকমের সাজ-সরঞ্জাম যোগাড় করে রেখেছেন। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর; বাগভী]

৩২ : ২৩
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُنْ فِي مِرْيَةٍ مِنْ لِقَائِهِ ۖ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِبَنِي إِسْرَائِيلَ

আর অবশ্যই আমরা মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতএব আপনি তার সাক্ষাত সম্বন্ধে সন্দেহে থাকবেন না [১] এবং আমরা ওটাকে করে দিয়েছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য হিদায়াতস্বরূপ।

ফুটনোট

[১] لقاء শব্দের অর্থ সাক্ষাৎ। এ আয়াতে কার সাথে সাক্ষাৎ বোঝানো হয়েছে সে সম্বন্ধে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। لقا ىٔه এর ه (সর্বনাম) কিতাব অর্থাৎ কুরআনের দিকে ধাবিত করে এই অর্থ করা যায় যে, যেরূপভাবে মহান আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালামকে গ্ৰন্থ প্রদান করেছেন অনুরূপভাবে আপনার প্রতিও আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে গ্ৰন্থ অবতীর্ণ হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করবেন না। যেমন কুরআন সম্পর্কে অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং নিশ্চয় আপনাকে প্রজ্ঞাময় প্রশংসিতের পক্ষ থেকে কুরআন প্রদান করা হবে”। [সূরা আন-নামল: ৬] ইবনে-আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এবং কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহ এর ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, لقا ىٔه এর ه (সর্বনাম) মুসা আলাইহিস সালাম এর দিকে ধাবিত হয়েছে। সে হিসেবে এ আয়াতে মুসা আলাইহিস সালাম এর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাতের সংবাদ দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আপনি এ সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করবেন না যে, মূসা আলাইহিস সালামের সাথে আপনার সাক্ষাত সংঘটিত হবে। সুতরাং মে'রাজের রাতে এক সাক্ষাৎকার সংঘটিত হওয়ার কথা বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত; [দেখুন, বুখারী:৩২৩৯; মুসলিম:১৬৫] অতঃপর কেয়ামতের দিন সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও প্রমাণিত আছে। হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ এর ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, মূসা আলাইহিস সালামকে ঐশী গ্রন্থ প্রদানের দরুন যেভাবে মানুষ তাঁকে নানাভাবে দুঃখ-যন্ত্রণা দিয়েছে আপনিও এসব কিছুর সম্মুখীন হবেন বলে নিশ্চিত থাকুন। তাই কাফেরদের প্রদত্ত দুঃখ-যন্ত্রণার ফলে আপনি মনক্ষুন্ন হবেন না; বরং নবীগণের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়া স্বাভাবিক রীতি মনে করে আপনি তা বরদাশত করুন।

৩২ : ২৪
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا ۖ وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ

আর আমরা তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমাদের নির্দেশ অনুসারে হেদায়াত করত; যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর তারা আমাদের আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাস রাখত [১]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ আমি ইসরাঈল সম্প্রদায়ের মাঝে কিছু লোককে নেতা ও অগ্রপথিক নিযুক্ত করেছিলাম যারা তাঁদের পয়গম্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মহান প্রভুর নির্দেশানুসারে লোকদেরকে হেদায়াত করতেন। [দেখুন, মুয়াসসার]

৩২ : ২৬
أَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ ۖ أَفَلَا يَسْمَعُونَ

এটাও কি তাদেরকে হেদায়াত করলো না যে, আমরা তাদের পূর্বে ধ্বংস করেছি বহু প্রজন্মকে ---যাদের বাসভূমিতে তারা বিচরণ করে থাকে? নিশ্চয় এতে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে; তবুও কি তারা শুনবে না?
ফুটনোট

৩৯ : ২৩
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ ۚ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ

আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব যা সুসামঞ্জস্য [১] এবং যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয়। এতে, যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের শরীর শিউরে ওঠে, তারপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হিদায়াত, তিনি তা দ্বারা যাকে ইচ্ছে হিদায়াত করেন। আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন হেদায়াতকারী নেই।

ফুটনোট

[১] মুজাহিদ বলেন, পুরো কুরআনই সামঞ্জস্যপূর্ণ পুনঃ পুনঃ পঠিত। কাতাদাহ বলেন, এক আয়াত অন্য আয়াতের মত। দাহহাক বলেন, কুরআনে কোন কথাকে বারবার বলা হয়েছে যাতে করে তাদের রবের কথা বুঝা সহজ হয়। হাসান বসরী বলেন, কোন সুরায় একটি আয়াত আসলে অন্য সুরায় অনুরূপ আয়াত পাওয়া যায়। আব্দুর রহমান ইবন যায়েদ ইবন আসলাম বলেন, বারবার নিয়ে আসা হয়েছে যেমন মূসাকে কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, অনুরূপ সালেহ, হূদ ও অন্যান্য নবীদেরকেও ৷ [ইবন কাসীর] কাতাদা বলেন, এখানে ফরয বিষয়াদি, বিচারিক বিষয়াদি ও শরীআত নির্ধারিত সীমারেখার কথা বারবার এসেছে। [তাবারী।]

৩৯ : ৩৬
أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِنْ دُونِهِ ۚ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ

আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা আপনাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের ভয় দেখায় [১]। আর আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন হেদায়াতকারী নেই।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ তারা আপনাকে তাদের উপাস্য মা’বুদদের ভয় দেখায়। [তাবারী।]

৪০ : ৫৩
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْهُدَىٰ وَأَوْرَثْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ الْكِتَابَ

আর অবশ্যই আমরা মূসাকে দান করেছিলাম হেদায়াত এবং বনী ইসরাইলের উত্তরাধিকারী করেছিলাম কিতাবের,
ফুটনোট

৪০ : ৫৪
هُدًى وَذِكْرَىٰ لِأُولِي الْأَلْبَابِ

পথনির্দেশ ও উপদেশস্বরূপ বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য।
ফুটনোট

৪১ : ১৭
وَأَمَّا ثَمُودُ فَهَدَيْنَاهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمَىٰ عَلَى الْهُدَىٰ فَأَخَذَتْهُمْ صَاعِقَةُ الْعَذَابِ الْهُونِ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

আর সামূদ সম্প্রদায়, আমরা তাদেরকে পথনির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধপথে চলা পছন্দ করেছিল। ফলে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির বজ্রাঘাত তাদের পাকড়াও করল; তারা যা অর্জন করেছিল তার জন্য।
ফুটনোট

৪৩ : ১০
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَجَعَلَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে বানিয়েছেন শয্যা [১] এবং তাতে বানিয়েছেন তোমাদের চলার পথ [২], যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার ;

ফুটনোট

[১] উদ্দেশ্য এই যে, পৃথিবীর বাহ্যিক আকার শয্যা বা বিছানার মত এবং এতে বিছানার অনুরূপ আরাম পাওয়া যায়। সুতরাং এটা গোলাকার হওয়ার পরিপন্থী নয়। অন্যান্য স্থানেও পৃথিবীকে বিছানা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। [সূরা ত্বা-হা: ৫৩, সূরা আন-নাবা: ৬]

লক্ষণীয় যে, সে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হচ্ছে, مهد শব্দটির এক অর্থ হচ্ছে, সুস্থির বিছানা বা শয্যা। অপর অর্থ হচ্ছে, ‘দোলনা’। অর্থাৎ একটি শিশু যেভাবে তার দোলনার মধ্যে আরামে শুয়ে থাকে মহাশূন্যে ভাসমান এই বিশাল গ্রহকে তোমাদের জন্য তেমনি আরামের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। [ইবনে কাসীর, জালালাইন, আয়সার আত-তাফাসির]

[২] ভূ-পৃষ্ঠে পাহাড়ের মাঝে গিরিপথ এবং পাহাড়ী ও সমতল ভূমি অঞ্চলে নদী হচ্ছে সেই সব প্রাকৃতিক পথ যা আল্লাহ তৈরী করেছেন [তাবারী, সা’দী]

৪৫ : ২৩
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

তবে কি আপনি লক্ষ্য করেছেন তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহ্‌ বানিয়ে নিয়েছে? আর তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করেছেন [১] এবং তিনি তার কান ও হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন। আর তিনি তার চোখের উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে হেদায়েত দিবে? তবু কি তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করবে না?

ফুটনোট

[১] এই বাক্যাংশের একটি অর্থ হতে পারে এই যে, জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর পক্ষ থেকে সে ব্যক্তিকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কেননা সে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার দাস হয়ে গিয়েছিলো। আরেকটি অর্থ হতে পারে এই যে, সে তার প্রবৃত্তির ইচ্ছা ও কামনা-বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে বসেছে এ বিষয়টি জেনে আল্লাহ তাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন। [দেখুন, কুরতুবী]

৪৯ :
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ ۚ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ

আর তোমরা জেনে রাখা যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন ; তিনি বহু বিষয়ে তোমাদের কথা শুনলে তোমরাই কষ্ট পেতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং সেটাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের কাছে অপ্ৰিয়। তারাই তো সত্য পথপ্ৰাপ্ত।
ফুটনোট

৫৩ : ২৩
إِنْ هِيَ إِلَّا أَسْمَاءٌ سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ ۚ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنْفُسُ ۖ وَلَقَدْ جَاءَهُمْ مِنْ رَبِّهِمُ الْهُدَىٰ

এগুলো কিছু নাম মাত্র যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছ, যার সমর্থনে আল্লাহ্‌ কোন দলীলপ্রমাণ নাযিল করেননি। তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়াত এসেছে [১]।

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ প্রত্যেক যুগেই আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী-রাসূলগণ এসব পথহারা মানুষকে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তারপর এখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে সত্যিকার অর্থে বিশ্ব-জাহানের প্রভুত্ব ও ইবাদত কার প্রাপ্য তা জানিয়ে দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর]

৫৩ : ৩০
ذَٰلِكَ مَبْلَغُهُمْ مِنَ الْعِلْمِ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اهْتَدَىٰ

এটাই তাদের জ্ঞানের শেষ সীমা। নিশ্চয় আপনার রব, তিনিই ভাল জানেন কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন কে হেদায়াতপ্ৰাপ্ত হয়েছে।
ফুটনোট

৬২ :
مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا ۚ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা বহন করেনি, তারা গাধার মত! যে বহু পুস্তক বহন করে [১]। কত নিকৃষ্ট সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে ! আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।

ফুটনোট

[১] এ আয়াতাংশের দুটি অর্থ। একটি সাধারণ অর্থ এবং অপরটি বিশেষ অর্থ। সাধারণ অর্থ হলো, যাদের ওপর তাওরাতের জ্ঞান অর্জন, তদনুযায়ী আমল এবং তাওরাত অনুসারে দুনিয়াকে পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা তাদের এ দায়িত্ব বুঝেনি এবং তার হকও আদায় করেনি। বিশেষ অর্থ হলো, তাওরাতের ধারক ও বাহক গোষ্ঠী হওয়ার কারণে যাদের কাজ ছিল সবার আগে অগ্রসর হয়ে সেই রাসূলকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যার আগমনের সুসংবাদ তাওরাতে স্পষ্ট ভাষায় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাই তার সবচেয়ে বেশী শক্রতা ও বিরোধিতা করেছে এবং তাওরাতের শিক্ষার দাবী পূরণ করেনি। পার্থিব জাকজমক ও ধনৈশ্বর্য তাদেরকে তাওরাত থেকে বিমুখ করে রেখেছে। ফলে তারা তাওরাতের পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও তাওরাতের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ মুর্থ ও অনভিজ্ঞের পর্যয়ে চলে এসেছে।

আলোচ্য আয়াতে তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে যে, তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে গর্দভ, যার পিঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৃহদাকার গ্রন্থ চাপিয়ে দেয়া হয়। এই গর্দভ সেই বোঝা বহন তো করে, কিন্তু তার বিষয়বস্তুর কোন খবর রাখে না এবং তাতে তার কোন উপকার হয় না। ইয়াহুদীদের অবস্থাও তদ্রুপ। তারা পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের জন্যে তাওরাতকে বহন করে এবং এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে জাঁকজমক ও প্রতিপত্তি লাভ করতে চায়, কিন্তু এর দিকনির্দেশ দ্বারা কোন উপকার লাভ করে না। [দেখুন-ইবন কাসীর, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]

৭২ : ১৩
وَأَنَّا لَمَّا سَمِعْنَا الْهُدَىٰ آمَنَّا بِهِ ۖ فَمَنْ يُؤْمِنْ بِرَبِّهِ فَلَا يَخَافُ بَخْسًا وَلَا رَهَقًا

‘এও যে, আমরা যখন হিদায়াতের বাণী শুনলাম তাতে ঈমান আনলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি তার রবের প্রতি ঈমান আনে তার কোন ক্ষতি ও কোন অন্যায়ের আশংকা থাকবে না [১]।

ফুটনোট

[১] بخس শব্দের অর্থ প্রাপ্য অপেক্ষা কম দেয়া এবং رهق শব্দের অর্থ যুলুম করা, অত্যাচার করা। উদ্দেশ্য এই যে মুমিনের প্রতিদান কম দেয়া হবে না এবং আখেরাতে তার উপর যুলুম করে কিছু বাড়িয়ে দেওয়াও হবে না। [ইবন কাসীর]

৭২ : ২১
قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا رَشَدًا

বলুন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা কল্যাণের মালিক নই৷ ’
ফুটনোট

৮৭ :
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى

আপনি আপনার সুমহান রবের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন [১] ,

ফুটনোট

সূরা সম্পর্কিত তথ্যঃ

এ সূরা মক্কায় নাযিল হওয়া প্রাচীন সূরাসমূহের অন্যতম। বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের মধ্যে সর্বপ্রথম মুস‘আব ইবনে উমায়ের এবং আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মে মাকতুমই মদীনায় হিজরত করে আসেন। তারা দু‘জনই আমাদেরকে কুরআন পড়ে শোনাতেন। তারপর আম্মার, বিলাল ও সা‘দ আসলেন। তারপর উমর ইবনুল খাত্তাব আসলেন বিশজনকে সাথে নিয়ে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলেন, মদীনাবাসীগণ তার আগমনে যে রকম খুশী হয়েছিলেন তেমন আর কারও আগমনে খুশী হননি। এমনকি আমি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে একথা বলতে শুনেছি যে, এই হলো আল্লাহ্র রাসূল। তিনি আমাদের মাঝে তাশরীফ রেখেছেন। তিনি আসার আগেই আমি ‘সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আ‘লা’ এবং এ ধরনের আরও কিছু সূরা পড়ে নিয়েছিলাম।” [বুখারী: ৪৯৪১, ৩৯২৪, ৩৯২৫, ৪৯৯৫] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, “তুমি কেন ‘সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আ‘লা, ওয়াস শামছি ওয়া দুহাহা, ওয়াল্লাইলে ইযা ইয়াগসা” এ সূরাগুলো দিয়ে সালাত পড়ালে না?” [বুখারী: ৭০৫, মুসলিম: ৪৬৫] অন্য হাদীসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদের সালাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা এবং হাল আতাকা হাদীসুল গাশীয়াহ’ পড়তেন। আর যদি জুম‘আর দিনে ঈদ হতো তবে তিনি দুটাতেই এ সূরা দুটি দিয়ে সালাত পড়াতেন।” [মুসনাদে আহমাদ: ৪/২৭৭] কোন কোন হাদীসে এসেছে যে, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুম‘আ ও দুই ঈদের সালাতে “সাব্বিবহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা এবং হাল আতাকা হাদীসুল গাশীয়াহ’ দিয়ে সালাত পড়াতেন। এমনকি কখনো যদি জুম‘আ ও ঈদের সালাতও একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়ে যেত তখন তিনি উভয় সালাতে এ দু’ সূরাই পড়তেন। [মুসলিম: ৮৭৮, আবুদাউদ: ১১২২, তিরমিয়ী: ৫৩৩, নাসায়ী: ১৪২৪, ১৫৬৮, ১৫৯০, ইবনে মাজহ: ১২৮১] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতরের সালাতে “সাব্বিবহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা, কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন এবং কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, পড়তেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি এর সাথে ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’ও পড়তেন। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪০৬, ৫/১২৩, আবুদাউদ: ১৪২৪, মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/৩০৫] ইবনে আব্বাসরা দিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই এ আয়াত পড়তেন তখন বলতেন, ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা’। [আবু দাউদ: ৮৮৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/২৩২, মুস্তাদরাকে হাকিম:১/২৬৩]

--------------------

[১] আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদেরকে তাঁর তাসবীহ বা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যে পবিত্ৰতা ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহ্র যিকির, ইবাদাত, তাঁর মাহাত্নের জন্য বিনয়, দৈন্যদশা ও হীনাবস্থা প্ৰকাশ পায়। আর তাঁর তাসবীহ যেন তাঁর সত্তার মাহাত্ম উপযোগী হয়। যেন তাঁকে তাঁর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ দিয়েই সেগুলোর মহান অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখেই কেবল আহ্বান করা হয়। [সা‘দী]

৮৭ :
الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ

যিনি [১] সৃষ্টি করেন [২] অতঃপর সুঠাম করেন [৩]।

ফুটনোট

[১] এখানে মূলত: আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার কারণ ও হেতুসমূহ বর্ণনা করা হচ্ছে। এ আয়াত এবং এর পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে জগৎ সৃষ্টিতে আল্লাহ্র অপার রহস্য ও শক্তি সম্পর্কিত কতিপয় কর্মগত গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে।

[২] অর্থাৎ সৃষ্টি করেছেন। কোন কিছুকে নাস্তি থেকে আস্তিতে আনয়ন করেছেন। কোন সৃষ্টির এ কাজ করার সাধ্য নেই; একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার অপার কুদরতই কোন পূর্ব-নমুনা ব্যতিরেকে যখন ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা নাস্তি থেকে আস্তিতে আনয়ন করে।

[৩] অর্থ সামঞ্জস্যপূর্ণ, মজবুত ও সুন্দর করেছেন। [সা‘দী]। অর্থাৎ তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আর যে জিনিসটিই সৃষ্টি করেছেন তাকে সঠিক ও সুঠাম দেহসৌষ্ঠব দান করেছেন তার মধ্যে ভারসাম্য ও শক্তির অনুপাত সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাকে এমন আকৃতি দান করেছেন যে, তার জন্য এর চেয়ে ভালো আকৃতির কল্পনাই করা যেতে পারে না। একথাটিকে অন্যত্র বলা হয়েছে, “তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে চমৎকার তৈরি করেছেন।” [সূরা আস-সাজদাহ: ৭]

৮৭ :
وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ

আর যিনি নির্ধারণ করেন [১] অতঃপর পথনির্দেশ করেন [২] ,

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ প্রতিটি বস্তুকে তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। প্রতিটি জিনিস সে তাকদীর অনুসরণ করছে। [সা’দী]

[২] অর্থাৎ স্রষ্টা যে কাজের জন্যে যাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সে কাজের পথনির্দেশও দিয়েছেন। সত্যিকারভাবে এ পথনির্দেশে আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টিই অন্তর্ভুক্ত আছে। কেননা, এক বিশেষ ধরনের বুদ্ধি ও চেতনা আল্লাহ্ তা‘আলা সবাইকে দিয়েছেন, যদিও তা মানুষের বুদ্ধি ও চেতনা থেকে নিম্নস্তরের। অন্য আয়াতে আছে:

قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ

“ তিনি বললেন , ‘আমাদের প্রতিপালক তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুর জন্য তাকদীর নির্ধারণ করেছেন, তারপর পথনির্দেশ করেছেন।” [সূরা ত্বাহা: ৫০] এ হিসেবে আলোচ্য আয়াতের অর্থ, আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুকে সৃষ্টি করে এর জন্য তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। তারপর সে তাকদীর নির্ধারিত বিষয়ের দিকে মানুষকে পরিচালিত করছেন। মুজাহিদ বলেন, মানুষকে সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যের পথ দেখিয়েছেন। আর জীব-জন্তুকে তাদের চারণভূমির পথ দেখিয়েছেন। [ইবন কাসীর]

৯২ : ১২
إِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدَىٰ

নিশ্চয় আমাদের কাজ শুধু পথনির্দেশ করা [১] ,

ফুটনোট

[১] অর্থাৎ হেদায়াত ও প্রদর্শিত সরল পথ প্রদর্শনের দায়িত্ব আল্লাহ্ তা‘আলার। এ আয়াতের আরেকটি অর্থ হতে পারে, আর তা হলো, হেদায়াতপূর্ণ সরল পথ আল্লাহ্ তা‘আলার সান্নিধ্যে পৌছে দেয়, যেমনিভাবে ভ্রষ্টপথ জাহান্নামে পৌছে দেয়। পবিত্র কুরআনে অন্যত্র আল্লাহ্ বলেছেন, “আর সোজা পথ (দেখাবার দায়িত্ব) আল্লাহ্রই ওপর বার্তায় যখন বাঁকা পথও রয়েছে।” [সূরা আন-নাহল: ৯] [তাবারী, সা‘দী]

৯৩ :
وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ

আর তিনি আপনাকে পেলেন পথ সম্পর্কে অনবহিত, অতঃপর তিনি পথের নির্দেশ দিলেন [১]।

ফুটনোট

[১] দ্বিতীয় নেয়ামত হচ্ছে, আপনাকে ضال পেয়েছি। এ শব্দটির অর্থ পথভ্রষ্টও হয় এবং অনভিজ্ঞ, অনবহিত বা গাফেলও হয়। এখানে দ্বিতীয় অর্থই উদ্দেশ্য। নবুওয়ত লাভের পূর্বে তিনি আল্লাহ্র বিধি-বিধান সম্পর্কে, ঈমান সম্পর্কে অনবহিত ছিলেন। অতঃপর নবুওয়তের পদ দান করে তাকে পথনির্দেশ দেয়া হয়, যা তিনি জানতেন না তা জানানো হয়; সর্বোত্তম আমলের তৌফিক দেওয়া হয়। [কুরতুবী, মুয়াসসার]

৯৬ : ১১
أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ عَلَى الْهُدَىٰ

আমাকে বল! যদি তিনি হিদায়াতের উপর থাকেন,
ফুটনোট

0:00
0:00