হারুত/মারুত
হারুত/মারুত
: ১০২
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ ۚ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

আর সুলাইমানের রাজত্বে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো তারা তা অনুসরণ করেছে। আর সুলাইমান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষ কে শিক্ষা দিত যাদু ও (সে বিষয় শিক্ষা দিত) যা বাবিল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর নাযিল হয়েছিলো। তারা উভয়েই এই কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, ‘আমরা নিছক একটি পরীক্ষা ; কাজেই তুমি কুফরী করো না’ [১]। তা সত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন যাদু শিখতো যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতো [২]। অথচ তারা আল্লাহ্‌র অনুমতি ব্যাতীত তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারতো না। আর তারা তা-ই শিখতো যা তাদের ক্ষতি করতো এবং কোন উপকারে আসত না আর তারা নিশ্চিত জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে, (অর্থাৎ যাদুর আশ্রয় নেয়) তার জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে, তা খুবই মন্দ, যদি তারা জানতো !

ফুটনোট

[১] যাদু এমন এক বিষয়কে বলা হয়, যার উপকরণ নিতান্ত গোপন ও সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। যাদু এমন সব গোপনীয় কাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়, যা দৃষ্টির অগোচরে থাকে। যাদুর মধ্যে মন্ত্রপাঠ, ঝাড়ফুক, বাণী উচ্চারণ, ঔষধপত্র ও ধুম্ৰজাল - এসব কিছুর সমাহার থাকে। যাদুর বাস্তবতা রয়েছে। ফলে মানুষ কখনো এর মাধ্যমে অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো নিহতও হয় এবং এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাও সৃষ্টি করা যায়। তবে এর প্রতিক্রিয়া তাকদীরের নির্ধারিত হুকুম ও আল্লাহ্‌র অনুমতিক্রমেই হয়ে থাকে। এটা পুরোপুরি শয়তানী কাজ। এ প্রকার কাজ শির্কের অন্তর্ভুক্ত। দু'টি কারণে যাদু শির্কের অন্তর্ভুক্ত। (এক) এতে শয়তানদের ব্যবহার করা হয়। তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা হয় এবং তাদের পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাদের নৈকট্য অর্জন করা হয়। (দুই) এতে গায়েবী ইলম ও তাতে আল্লাহ্‌র সাথে শরীক হবার দাবী করা হয়। আবার কখনো কখনো যাদুকরকে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। এ সবগুলোই মূলতঃ ভ্রষ্টতা ও কুফরী। তাই কুরআনুল কারীমে যাদুকে সরাসরি কুফরী-কর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যাদু ও মু'জিযার পার্থক্যঃ নবীগণের মু'জিযা দ্বারা যেমন অস্বাভাবিক ও অলৌকিক ঘটনাবলী প্রকাশ পায়, যাদুর মাধ্যমেও তেমনি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। ফলে মূৰ্খ লোকেরা বিভ্রান্তিতে পতিত হয়ে যাদুকরদেরকেও সম্মানিত ও মাননীয় মনে করতে থাকে। এ কারণে এতদুভয়ের পার্থক্য বর্ণনা করা দরকার। মু'জিযা প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াই সরাসরি আল্লাহ্‌র কাজ আর যাদু অদৃশ্য প্রাকৃতিক কারণের প্রভাব। এ পার্থক্যটিই মু'জিযা ও যাদুর স্বরূপ বুঝার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু তা সত্বেও এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে, সাধারণ লোক এই পার্থক্যটি কিভাবে বুঝবে? কারণ, বাহ্যিক রূপ উভয়েরই এক। এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, মু'জিযা ও কারামত এমন ব্যক্তিবর্গের দ্বারা প্রকাশ পায়, যাদের আল্লাহ্‌ভীতি, পবিত্রতা, চরিত্র ও কাজকর্ম সবার দৃষ্টির সামনে থাকে। পক্ষান্তরে যাদু তারাই প্রদর্শন করে, যারা নোংরা, অপবিত্র এবং আল্লাহ্‌র যিক্‌র থেকে দূরে থাকে। এসব বিষয় চোখে দেখে প্রত্যেকেই মু'জিযা ও যাদুর পার্থক্য বুঝতে পারে।

নবীগণের উপর যাদু ক্রিয়া করে কি না? এ প্রশ্নের উত্তর হবে ইতিবাচক। কারণ, পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যাদু প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক কারণের প্রভাব। নবীগণ প্রাকৃতিক কারণের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হন। এটা নবুওয়াতের মর্যাদার পরিপন্থী নয়। সবাই জানেন, বাহ্যিক কারণ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে নবীগণ ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হন, রোগাক্রান্ত হন এবং আরোগ্য লাভ করেন। তেমনিভাবে যাদুর অদৃশ্য কারণ দ্বারাও তারা প্রভাবান্বিত হতে পারেন। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, ইয়াহুদীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যাদু করেছিল এবং সে যাদুর কিছু প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ পেয়েছিল। ওহীর মাধ্যমে তা জানা সম্ভব হয়েছিল এবং যাদুর প্রভাব দূরও করা হয়েছিল। [দেখুন, বুখারী ৩২৬৮, মুসলিম: ২১৮৯]

তাছাড়া, মূসা '‘আলাইহিস সালাম-এরও যাদুর প্রভাবে প্রভাবান্বিত হওয়ার ঘটনা কুরআনেই উল্লেখিত রয়েছে

(يُخَيَّلُ اِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ اَنَّهَا تَسْعٰي)

এবং

(فَاَوْجَسَ فِيْ نَفْسِهٖ خِيْفَةً مُّوْسٰى) [ত্বহাঃ ৬৬-৬৭]

যাদুর কারণেই মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। [মা'আরিফুল কুরআন]

[২] এ ব্যাপারে এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইবলীস তার চেয়ারটি পানির উপর স্থাপন করে। তারপর সে তার বাহিনীকে বিভিন্ন দিকে প্রেরণ করে। যে যত বড় ফিতনা সৃষ্টি করতে পারবে তার কাছে তার মর্যাদা তত নৈকট্যপূর্ণ। তার বাহিনীর কেউ এসে বলে যে, আমি এই এই করেছি, সে বলে যে, তুমি কিছুই করনি। তারপর আরেক জন এসে বলে যে, আমি এক লোককে যতক্ষণ পর্যন্ত তার ও তার স্ত্রীর মাঝে সম্পর্কচ্যুতি না ঘটিয়েছি ততক্ষণ তাকে ছাড়িনি। তখন শয়তান তাকে তার কাছে স্থান দেয় এবং বলে, হ্যা, তুমি " অর্থাৎ তুমি একটা বিরাট করে এসেছ। [মুসলিম: ২৮১৩]

0:00
0:00