হযরত ঈসা আঃ
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَقَفَّيْنَا مِنْ بَعْدِهِ بِالرُّسُلِ ۖ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لَا تَهْوَىٰ أَنْفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقًا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًا تَقْتُلُونَ
অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রাসূলগণকে পাঠিয়েছি এবং আমরা মারইয়াম-পূত্র ‘ঈসা কে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি [১] এবং ‘রুহুল কুদুস’ [২] দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি। তবে কি যখনি কোন রাসূল তোমাদের কাছে এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের মনঃপুত নয় তখনি তোমরা অহংকার করেছো ? অতঃপর (নবীদের) একদলের উপর মিথ্যারোপ করেছো এবং একদলকে করেছো হত্যা ?
إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ
স্মরণ করুন, যখন ফেরেশ্তাগণ বললেন, ‘হে মারিয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আপনাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন [১]। তার নাম মসীহ্, মারিয়াম তনয় ঈসা, তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তগণের অন্যতম হবেন [২]। ’
وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَمِنَ الصَّالِحِينَ
আর তিনি দোলনায় [১] ও বয়োঃপ্রাপ্ত অবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলবেন [২] এবং তিনি হবেন পুণ্যবানদের একজন। ’
قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
সে বলল, ‘হে আমার রব! আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি, এমতাবস্থায় আমার সন্তান হবে কিভাবে?’ তিনি (আল্লাহ্) বললেন, ‘এভাবেই’, আল্লাহ্ যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায় [১]।
وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ
আর তিনি তাকে শিক্ষা দেবেন কিতাব, হিকমত, তাওরাত ও ইঞ্জীল। ’
وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنِّي قَدْ جِئْتُكُمْ بِآيَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ ۖ أَنِّي أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ ۖ وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِي الْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ اللَّهِ ۖ وَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
আর তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য রাসূলরূপে’ (প্রেরণ করবেন, তিনি বলবেন) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নিদর্শন নিয়ে এসেছি যে, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দ্বারা একটি পাখিসদৃশ আকৃতি গঠন করব; তারপর তাতে আমি ফুঁ দেব; ফলে আল্লাহ্র হুকুমে সেটা পাখি হয়ে যাবে। আর আমি আল্লাহ্র হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থকে নিরাময় করব এবং মৃতকে জীবিত করব। আর তোমরা তোমাদের ঘরে যা খাও এবং মজুদ কর তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। নিশ্চয় এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে যদি তোমরা মুমিন হও। ’
فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنْصَارُ اللَّهِ آمَنَّا بِاللَّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
যখন ‘ঈসা তাদের থেকে কুফরী উপলব্ধি করলেন তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্র পথে কারা আমার সাহায্যকারী [১]?’ হাওয়ারীগণ [২] বলল, ‘আমরাই আল্লাহ্র সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহ্তে ঈমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে নিশ্চয় আমরা মুসলিম।
إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَىٰ إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ۖ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنْتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ্ বললেন, ‘হে ‘ঈসা! নিশ্চয় আমি আপনাকে পরিগ্রহণ করব [১], আমার নিকট আপনাকে উঠিয়ে নিব [২] এবং যারা কুফরী করে তাদের মধ্য থেকে আপনাকে পবিত্র করব। আর আপনার অনুসারিগণকে কেয়ামত পর্যন্ত প্রাধান্য দিব, তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। ’ অতঃপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটেছে আমি তোমাদের মধ্যে তা মীমাংসা করে দেব [৩]।
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
নিশ্চয় আল্লাহ্র নিকট ‘ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্তসদৃশ। তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন; তারপর তাকে বলেছিলেন, ‘হও’, ফলে তিনি হয়ে যান।
وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ ۚ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا
আর ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারঈয়াম তনয় ‘ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল [১]। আর নিশ্চয় যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি,
بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় [১]।
وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا
কিতাবীদের মধ্য থেকে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে [১] তার উপর ঈমান আনবেই। আর কেয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন [২]।
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَىٰ نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَارُونَ وَسُلَيْمَانَ ۚ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا
নিশ্চয় আমরা আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম [১], যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম [২], আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া’কূব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের নিকটও ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে প্রদান করেছিলাম যাবূর।
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۖ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ ۚ انْتَهُوا خَيْرًا لَكُمْ ۚ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ سُبْحَانَهُ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ ۘ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
হে কিতাবীরা! স্বীয় দ্বীনের মধ্যে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না [১] এবং আল্লাহর উপর সত্য ব্যতীত কিছু বলো না। মারইয়াম-তনয় ঈসা মসীহ কেবল আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর বাণী [২], যা তিনি মারইয়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন ও তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। কাজেই তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের উপর ঈমান আন এবং বলো না, ‘তিন [৩] !’ নিবৃত্ত হও, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। আল্লাহই তো এক ইলাহ; তাঁর সন্তান হবে - - -তিনি এটা থেকে পবিত্র-মহান। আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই; আর কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট [৪]।
لَنْ يَسْتَنْكِفَ الْمَسِيحُ أَنْ يَكُونَ عَبْدًا لِلَّهِ وَلَا الْمَلَائِكَةُ الْمُقَرَّبُونَ ۚ وَمَنْ يَسْتَنْكِفْ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيَسْتَكْبِرْ فَسَيَحْشُرُهُمْ إِلَيْهِ جَمِيعًا
মসীহ আল্লাহর বান্দা হওয়াকে কখনো হেয় মনে করেন না, এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশ্তাগণও করে না। আর কেউ তাঁর ইবাদাতকে হেয় জ্ঞান করলে এবং অহংকার করলে তিনি অচিরেই তাদের সবাইকে তাঁর কাছে একত্র করবেন [১]।
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ۚ قُلْ فَمَنْ يَمْلِكُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا إِنْ أَرَادَ أَنْ يُهْلِكَ الْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ۗ وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
যারা বলে, ‘নিশ্চয় মারইয়াম-তনয় মসীহই আল্লাহ’, তারা অবশ্যই কুফরী করেছে [১]। বলুন, ‘আল্লাহ যদি মারইয়াম-তনয় মসীহ, তাঁর মাতা এবং দুনিয়ার সকলকে ধ্বংস করতে ইচ্ছে করেন তবে তাঁকে বাঁধা দেবার শক্তি কার আছে?’ আর আসমানসমূহ ও যমীন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন [২] এবং আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ۖ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
যারা বলে, নিশ্চয় আল্লাহ্ তিনি তো মার্ইয়াম-তনয় মসীহ’, অবশ্যই তারা কুফরী করেছে [১]। অথচ মসীহ বলেছিলেন, ‘হে ইসরাঈল-সন্তানগণ! তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর’। নিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন [২] এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।
مَا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ وَأُمُّهُ صِدِّيقَةٌ ۖ كَانَا يَأْكُلَانِ الطَّعَامَ ۗ انْظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ الْآيَاتِ ثُمَّ انْظُرْ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
মারইয়াম-তনয় মসীহ শুধু একজন রাসূল। তার আগে বহু রাসূল গত হয়েছেন [১] এবং তাঁর মা অত্যন্ত সত্য নিষ্ঠা ছিলেন। তারা দুজনেই খাওয়া-দাওয়া করতেন [২]। দেখনু আমরা তাদের জন্য আয়াতগুলোকে কেমন বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি; তারপরও দেখুন, তারা কিভাবে সত্যবিমুখ হয়!
إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ اذْكُرْ نِعْمَتِي عَلَيْكَ وَعَلَىٰ وَالِدَتِكَ إِذْ أَيَّدْتُكَ بِرُوحِ الْقُدُسِ تُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا ۖ وَإِذْ عَلَّمْتُكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ ۖ وَإِذْ تَخْلُقُ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ بِإِذْنِي فَتَنْفُخُ فِيهَا فَتَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِي ۖ وَتُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ بِإِذْنِي ۖ وَإِذْ تُخْرِجُ الْمَوْتَىٰ بِإِذْنِي ۖ وَإِذْ كَفَفْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَنْكَ إِذْ جِئْتَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ إِنْ هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُبِينٌ
স্মরণ করুন,যখন আল্লাহ্ বলবেন, ‘ হে মারইয়ামের পুত্র ‘ঈসা ! আপনার প্রতি ও আপনার জননীর প্রতি আমার নেয়ামত [১] স্মরণ করুন,যখন ‘রুহুল কুদুস [২] দিয়ে আমি আপনাকে শক্তিশালী করেছিলাম এবং আপনি দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলতেন; আপনাকে কিতাব ,হিকমত,তাওরাত ও ইঞ্জীল শিক্ষা দিয়েছিলাম; আপনি কাদামাটি দিয়ে আমার অনুমতিক্রমে পাখির মত আকৃতি গঠন করতেন এবং তাতে ফুঁ দিতেন,ফলে আমার অনুমতিক্রমে তা পাখি হয়ে যেত; জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীদেরকে আপনি আমার অনুমতিক্রমে নিরাময় করতেন এবং আমার অনুমতিক্রমে আপনি মৃতকে জীবিত করতেন; আর যখন আমি আপনার থেকে ইসরাঈল-সন্তানকে বিরত রেখেছিলাম [৩]; আপনি যখন তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন এনেছিলেন তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিলো তারা বলেছিল, ‘এটাতো স্পষ্ট জাদু।’
وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚ إِنْ كُنْتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ
আরও স্মরণ করুন, আল্লাহ্ যখন বলবেন, ‘হে মারইয়াম –তনয় ‘ঈসা! আপনি কি লোকদেরকে বলেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আমাকে আমার জননীকে দুই ইলাহরূপে গ্রহণ কর? ‘তিনি বলবেন, ‘আপনিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে আপনি তো তা জানতেন। আমার অন্তরের কথাতো আপনি জানেন, কিন্তু আপনার অন্তরের কথা আমি জানি না ; নিশ্চয় আপনি অদৃশ্য সম্বদ্ধে সবচেয়ে ভাল জানেন।’
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ۖ ذَٰلِكَ قَوْلُهُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ ۖ يُضَاهِئُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَبْلُ ۚ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ ۚ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘উযাইর আল্লাহ্র পুত্র’ [১], এবং নাসারারা বলে, ‘ মসীহ্ আল্লাহ্র পুত্র।’ এটা তাদের মুখের কথা আগে যারা কুফরী করেছিল তারা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করুন। কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে [২]!
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
তারা আল্লাহ্ ব্যতীত তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগিদের [১] কে তাদের রবরূপে গ্রহন করেছে [২] এবং মার্’ইয়াম- পুত্র মসীহ্ কেও। অথচ এক ইলাহের ‘ইবাদাত করার জন্যই তারা আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নাই। তারা যে শরীক করে তা থেকে তিনি কত না পবিত্র [৩]!
قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ هُوَ الْغَنِيُّ ۖ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنْ عِنْدَكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ بِهَٰذَا ۚ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
তারা বলে, ‘আল্লাহ্ সন্তান গ্রহন করেছেন।’ তিনি মহান পবিত্র [১]! তিনি অভাবমুক্ত [২]! যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও যা কিছু আছে যমীনে তা তাঁরই। এ বিষয়ে তোমাদের কোন সনদ নেই। তোমরা কি আল্লাহ্র উপর এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না [৩]?
فَحَمَلَتْهُ فَانْتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا
অতঃপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল এবং তা সহ দূরের এক স্থানে চলে গেল [১]।
قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا
তিনি বললেন, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন,
وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنْتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
‘যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় [১] করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে [২]
وَبَرًّا بِوَالِدَتِي وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا شَقِيًّا
‘আর আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত, হতভাগ্য;
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি [১], যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হব।
ذَٰلِكَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ ۚ قَوْلَ الْحَقِّ الَّذِي فِيهِ يَمْتَرُونَ
এ-ই মারইয়াম-এর পুত্র ঈসা। আমি বললাম সত্য কথা, যে বিষয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করছে [১]
وَالَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِنْ رُوحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَا آيَةً لِلْعَالَمِينَ
এবং স্মরণ করুন সে নারীকে [১], যে নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করেছিল, অতঃপর তার মধ্যে আমরা আমাদের রূহ [২] ফুঁকে দিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম সৃষ্টিজগতের জন্য এক নিদর্শন।
وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ آيَةً وَآوَيْنَاهُمَا إِلَىٰ رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَمَعِينٍ
আর আমরা মারইয়াম-পুত্র ও তার জননীকে করেছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক অবস্থানযোগ্য ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে [১]।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۖ وَأَخَذْنَا مِنْهُمْ مِيثَاقًا غَلِيظًا
আর স্মরণ করুন, যখন আমরা নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করেছিলাম [১] এবং আপনার কাছ থেকেও, আর নূহ, ইব্রাহিম, মূসা, ও মারইয়াম পুত্র ঈসার কাছ থেকেও। আর আমরা তাদের কাছ থেকে গ্রহন করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার--
وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ
আর নিশ্চয় ‘ঈসা কিয়ামতের নিশ্চিত নিদর্শন ; কাজেই তোমারা কিয়ামতে সন্দেহ করোনা। আর তোমরা আমারই অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।
فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِنْ بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ أَلِيمٍ
অতঃপর তাদের মধ্য থেকে কতগুলো দল মতানৈক্য করল, কাজেই যালিমদের জন্য দুর্ভোগ যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির !
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ مُبِينٌ
আর স্মরণ করুন, যখন মারইয়াম—পুত্র ‘ঈসা বলেছিলেন, ‘হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব থেকে তোমাদের কাছে যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী এবং আমার পরে আহমাদ নামে [১] যে রাসূল আসবেন আমি তার সুসংবাদদাতা [২]। পরে তিনি [৩] যখন সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তাদের কাছে আসলেন তখন তারা বলতে লাগল, এটা তো স্পষ্ট জাদু।’
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا أَنْصَارَ اللَّهِ كَمَا قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّينَ مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنْصَارُ اللَّهِ ۖ فَآمَنَتْ طَائِفَةٌ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَكَفَرَتْ طَائِفَةٌ ۖ فَأَيَّدْنَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَىٰ عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوا ظَاهِرِينَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও, যেমন মারইয়াম-পুত্র ‘ঈসা হাওয়ারীগণকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী হবে?’ হাওয়ারীগণ বলেছিলেন, ‘আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী [১]।’ তারপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। তখন আমরা যারা ঈমান এনেছিল, তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় তাদেরকে শক্তিশালী করলাম, ফলে তারা বিজয়ী হল [২]।