হযরত মুসা আঃ
وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَىٰ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَنْتُمْ ظَالِمُونَ
আর স্মরণ কর, যখন আমরা মূসার সাথে চল্লিশ রাতের অঙ্গীকার করেছিলাম [১], তার (চলে যাওয়ার) পর তোমরা গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে [২] ; আর তোমরা হয়ে গেলে যালিম [৩]।
وَإِذْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَالْفُرْقَانَ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
আর স্মরণ কর, যখন আমরা মূসাকে কিতাব ও ‘ফুরকান [১]’ দান করেছিলাম; যাতে তোমরা হিদায়াত লাভ করতে পার।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنْفُسَكُمْ بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوبُوا إِلَىٰ بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ عِنْدَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
আর স্মরণ কর, যখন মূসা আপনার জাতির লোকদের বললেন, ‘হে আমার জাতি! গো – বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহন করে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ, কাজেই তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করে তমাদের স্রষ্টার কাছে তওবা কর। তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তারপর তিনি তোমাদের কে ক্ষমা করেছিলেন। অবশ্যই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَنْ نُؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَأَنْتُمْ تَنْظُرُونَ
আর স্মরণ কর, যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা ! আমরা আল্লাহ্ কে প্রকাশ্যভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না’ , ফলে তোমাদেরকে বজ্র পাকড়াও করলো, যা তোমরা নিজেরাই দেখছিলে।
وَإِذِ اسْتَسْقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْحَجَرَ ۖ فَانْفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَشْرَبَهُمْ ۖ كُلُوا وَاشْرَبُوا مِنْ رِزْقِ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ
আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার জাতির জন্য পানি চাইলেন। আমরা বললাম, ‘আপনার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করুন’। ফলে তা হতে বারোটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হলো। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানি গ্রহণের স্থান জেনে নিলো। (বললাম), ‘আল্লাহ্র দেয়া জীবিকা হতে তোমরা খাও, পান কর এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না’।
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَنْ نَصْبِرَ عَلَىٰ طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنْبِتُ الْأَرْضُ مِنْ بَقْلِهَا وَقِثَّائِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا ۖ قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَىٰ بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ ۚ اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُمْ مَا سَأَلْتُمْ ۗ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ
আর যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা ! আমারা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করবো না। সুতরাং তুমি তোমার রব-এর কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর – তিনি যেন আমাদের জন্য ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সবজি, কাঁকুড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ উৎপাদন করেন’। মূসা বললেন, ‘তোমরা কি উত্তম জিনিসের বদলে নিম্নমানের জিনিস চাও ? তবে কোন শহরে চলে যাও, তোমরা যা চাও, সেখানে তা আছে’ [১]। আর তাদের উপর লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য আপতিত হলো এবং তারা আল্লাহ্র গযবের শিকার হলো। এটা এ জন্য যে , তারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহকে অস্বিকার করতো এবং নবীদের কে অন্যায়ভাবে হত্যা করতো [২]। অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করার জন্যই তাদের এ পরিণতি হয়েছিল [৩]।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُوا بَقَرَةً ۖ قَالُوا أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا ۖ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
আর স্মরন কর [১], যখন মূসা তার জাতিকে বললেন, ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার আদেশ দিয়েছেন’ , তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছো ?’ মূসা বললেন, ‘আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় চাই’।
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَقَفَّيْنَا مِنْ بَعْدِهِ بِالرُّسُلِ ۖ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لَا تَهْوَىٰ أَنْفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقًا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًا تَقْتُلُونَ
অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে পর্যায়ক্রমে রাসূলগণকে পাঠিয়েছি এবং আমরা মারইয়াম-পূত্র ‘ঈসা কে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি [১] এবং ‘রুহুল কুদুস’ [২] দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি। তবে কি যখনি কোন রাসূল তোমাদের কাছে এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের মনঃপুত নয় তখনি তোমরা অহংকার করেছো ? অতঃপর (নবীদের) একদলের উপর মিথ্যারোপ করেছো এবং একদলকে করেছো হত্যা ?
وَلَقَدْ جَاءَكُمْ مُوسَىٰ بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَنْتُمْ ظَالِمُونَ
অবশ্যই মূসা তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ [১] এসেছিলেন, তারপর তোমরা তার অনুপস্থিতিতে গো বৎস কে (উপাস্যরুপে) গ্রহন করেছিলে। বাস্তবিকই তোমরা যালিম [২]।
أَمْ تُرِيدُونَ أَنْ تَسْأَلُوا رَسُولَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوسَىٰ مِنْ قَبْلُ ۗ وَمَنْ يَتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ
তোমরা কি তোমাদের রাসূলকে সেরূপ প্রশ্ন করতে চাও যেরূপ প্রশ্ন পূর্বে মূসাকে করা হয়েছিল [১] ? আর যে ঈমানকে কুফরে পরিবর্তন করবে, সে অবশ্যই সরল পথ হারাল।
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র প্রতি এবং যা আমাদের নাযিল হয়েছে, এবং যা ইবরাহীম, ইসমা’ঈল, ইসহাক, ইয়া’কূব ও তার বংশধরদের প্রতি [১] প্রতি নাযিল হয়েছে, এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রব-এর নিকট হতে দেয়া হয়েছে [২]। আমরা তাদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না [৩]। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী’।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَىٰ إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا ۖ قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا ۖ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ
আপনি কি মুসার পরবর্তী ইসরাইল বংশীয় নেতাদের দেখেন নি? তারা যখন তাদের নবীকে বলেছিল, ‘আমাদের জন্য একজন রাজা নিজুক্ত কর যাতে আমরা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করতে পারি’, ‘তিনি বললেন, ‘এমন তো হবে না যে, তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হলে তখন আর তোমরা যুদ্ধ করবে না’ ? তারা বলল, ‘আমরা যখন নিজেদের আবাসভূমি ও স্বীয় সন্তান-সন্ততি হতে বহিষ্কৃত হয়েছি , তখন আল্লাহ্র পথে কেন যুদ্ধ করব না’? অতঃপর যখন তাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হল তখন তাদের কিছু সংখ্যক ছাড়া সবাই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল। আর আল্লাহ্ যালিমদের সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞানী।
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِمَّا تَرَكَ آلُ مُوسَىٰ وَآلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلَائِكَةُ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
আর, তাদের নবী তাদেরকে বলেছিলেন, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে , তোমাদের নিকট তাবূত [১] আসবে যাতে তোমাদের রব-এর নিকট হতে প্রশান্তি এবং মুসা ও হারুন বংশীয়গণ যা পরিত্যাগ করেছে তার অবশিষ্টাংশ থাকবে; ফেরেশতাগণ তা বহন করে আনবে। তোমরা যদি মুমিন হও তবে নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে’।
قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَالنَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
বলুন, ‘আমরা আল্লাহ্তে ও আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমা’ঈল, ইসহাক, ইয়া’কূব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা নাযিল হয়েছিল এবং যা মূসা, ‘ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছিল তাতে ঈমান এনেছি; আমরা তাঁদের কারও মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।’
يَسْأَلُكَ أَهْلُ الْكِتَابِ أَنْ تُنَزِّلَ عَلَيْهِمْ كِتَابًا مِنَ السَّمَاءِ ۚ فَقَدْ سَأَلُوا مُوسَىٰ أَكْبَرَ مِنْ ذَٰلِكَ فَقَالُوا أَرِنَا اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ بِظُلْمِهِمْ ۚ ثُمَّ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ فَعَفَوْنَا عَنْ ذَٰلِكَ ۚ وَآتَيْنَا مُوسَىٰ سُلْطَانًا مُبِينًا
কিতাবীগণ আপনার কাছে তাদের জন্য আসমান হতে একটি কিতাব নাযিল করতে বলে; তারা মূসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবী করেছিল। তারা বলেছিল, ‘আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও’। ফলে তাদের সীমালংঘনের কারণে তাদেরকে বজ্র পাকড়াও করেছিল; তারপর স্পষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আসার পরও তারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল; অতঃপর আমরা তা ক্ষমা করেছিলাম এবং আমরা মূসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছিলাম।
وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ ۚ وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَىٰ تَكْلِيمًا
আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে দেইনি [১]। আর অবশ্যই আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنْبِيَاءَ وَجَعَلَكُمْ مُلُوكًا وَآتَاكُمْ مَا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِنَ الْعَالَمِينَ
আর স্মরণ করুন [১], যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদের মধ্যে নবী করেছিলেন ও তোমাদেরকে রাজা-বাদশাহ করেছিলেন এবং সৃষ্টিকুলের কাউকেও তিনি যা দেননি তা তোমাদেরকে দিয়েছিলেন [২]।
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِنَّ فِيهَا قَوْمًا جَبَّارِينَ وَإِنَّا لَنْ نَدْخُلَهَا حَتَّىٰ يَخْرُجُوا مِنْهَا فَإِنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا فَإِنَّا دَاخِلُونَ
তারা বলল, ‘হে মূসা! নিশ্চয় সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রয়েছে এবং তারা সে স্থান থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনোই সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করব না। অতঃপর তারা সেখান থেকে বের হয়ে গেলে তবে নিশ্চয় আমরা সেখানে প্রবেশ করব’।
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِنَّا لَنْ نَدْخُلَهَا أَبَدًا مَا دَامُوا فِيهَا ۖ فَاذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ
তারা বলল, ‘হে মূসা! তারা যতক্ষণ সেখানে থাকবে ততক্ষণ আমরা সেখানে থাকবে ততক্ষণ আমরা সেখানে কখনো প্রবেশ করব না; কাজেই তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর। নিশ্চয় আমরা এখানেই বসে থাকব’।
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۚ كُلًّا هَدَيْنَا ۚ وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ ۖ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَارُونَ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
আর আমারা তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়া’কূব, এদের প্রত্যেককে হিদায়াত দিয়েছিলাম;পূর্বে নূহকেও আমারা হিদায়াত দিয়েছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ, সুলাইমান, আইউব, ইউনূস, মূসা ও হারূনকেও; আর এভাবেই মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করি ;
وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِذْ قَالُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَىٰ بَشَرٍ مِنْ شَيْءٍ ۗ قُلْ مَنْ أَنْزَلَ الْكِتَابَ الَّذِي جَاءَ بِهِ مُوسَىٰ نُورًا وَهُدًى لِلنَّاسِ ۖ تَجْعَلُونَهُ قَرَاطِيسَ تُبْدُونَهَا وَتُخْفُونَ كَثِيرًا ۖ وَعُلِّمْتُمْ مَا لَمْ تَعْلَمُوا أَنْتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ ۖ قُلِ اللَّهُ ۖ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِي خَوْضِهِمْ يَلْعَبُونَ
আর তারা আল্লাহকে তাঁর যথার্থ মর্যাদা দেয়নি,যখন তারা বলে, ‘আল্লাহ্ কোন মানুষের উপর কিছুই নাযিল করেননি [১]।বলুন ‘ কে নাযিল করেছে মূসার আনীত কিতাব যা মানুষের জন্য আলো ও হিদায়াতস্বরূপ, যা তোমারা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর ও অনেকাংশ গোপন রাখ এবং যা তোমাদের পিতৃপুরুষগণ ও তোমারা জানতে না তাও তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো ?’ বলুন , আল্লাহ্ই ; অতঃপর তাদেরকে তাদের আযাচিত সমালোচনার উপর ছেড়ে দিন,তারা খেলা করতে থাকুক। [২]।
ثُمَّ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ تَمَامًا عَلَى الَّذِي أَحْسَنَ وَتَفْصِيلًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لَعَلَّهُمْ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ
তারপর আমারা মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, যে ইহসান করে তার জন্য পরিপূর্ণতা, সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত এবং রহমতস্বরূপ...যাতে তারা তাদের রব-এর সাক্ষাত সম্বন্ধে ঈমান রাখে।
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَظَلَمُوا بِهَا ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ
তারপর আমরা তাদের পরে মূসাকে আমাদের নিদর্শনসহ ফির’আউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে প্রেরণ করেছি; কিন্তু তারা সে গুলোর সাথে অত্যাচার করেছে [১]। সুতরাং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল তা লক্ষ্য করুন।
وَقَالَ مُوسَىٰ يَا فِرْعَوْنُ إِنِّي رَسُولٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আর মূসা বললেন, ‘হে ফির’আউন [১]! নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে প্রেরিত।’
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ
তারা বলল, ‘হে মূসা! তুমিই কি নিক্ষেপ করবে, না আমরাই নিক্ষেপ করব [১]?’
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
আর আমরা মূসার কাছে ওহী পাঠালাম যে, ‘আপনি আপনার লাঠি নিক্ষেপ করুন' [১]। সাথে সাথে সেটা তারা যে অলীক বস্তু বানিয়েছিল তা গিলে ফেলতে লাগল ;
رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
‘মূসা ও হারূনের রব।’
وَقَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ ۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَاءَهُمْ وَنَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ
আর ফির’আউন সম্প্রদায়ের নেতারা বলল, ‘আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যদেরকে [১] বর্জন করতে দেবেন? সে বলল, ‘শীঘ্রই আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব। আর নিশ্চয় আমরা তাদের উপর শক্তিধর [২]।’
قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا ۖ إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
মূসা তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘ আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাও এবং ধৈর্য ধর; নিশ্চয় যমীন আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তার ওয়ারিশ বানান। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যই [১]।’
فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوا لَنَا هَٰذِهِ ۖ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوا بِمُوسَىٰ وَمَنْ مَعَهُ ۗ أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِنْدَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
অতঃপর যখন তাদের কাছে কোন কল্যাণ আসত, তখন তারা বলত, ‘এটা আমাদের পাওনা।’ আর যখন কোন অকল্যাণ পৌঁছত তখন তারা মূসা ও তার সাথীদেরকে অলক্ষুণে [১] গণ্য করত। সাবধান! তাদের অকল্যাণ তো কেবল আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে; কিন্তু তাদের অনেকেই জানে না।
وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ الرِّجْزُ قَالُوا يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِنْدَكَ ۖ لَئِنْ كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِي إِسْرَائِيلَ
আর যখন তাদের উপর শাস্তি আসত তারা বলত , ‘হে মূসা!তুমি তোমার রবের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর তোমার সাথে তিনি যে অংগীকার করেছেন সে অনুযায়ী; যদি তুমি আমাদের থেকে শাস্তি দূর করে দিতে পার তবে আমরা তো তোমার উপর ঈমান আনবই এবং বনী ইসরাঈলকেও তোমার সাথে অবশ্যই যেতে দেব।’
وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَىٰ قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَىٰ أَصْنَامٍ لَهُمْ ۚ قَالُوا يَا مُوسَى اجْعَلْ لَنَا إِلَٰهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ ۚ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ
আর আমরা বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করিয়ে দেই; তারপর তারা মূর্তিপূজায় রত এক জাতির কাছে উপস্থিত হয়। তারা বলল, ‘হে মূসা! তাদের মা’বুদদের ন্যায় আমাদের জন্যও একজন মা’বুদ স্থির করে দাও [১]। তিনি বললেন, ‘তোমরা তো এক জাহিল সম্প্রদায়।’
وَوَاعَدْنَا مُوسَىٰ ثَلَاثِينَ لَيْلَةً وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيقَاتُ رَبِّهِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ
আর মূসার জন্য আমরা ত্রিশ রাতের ওয়াদা করি [১] এবং আরো দশ দিয়ে তা পূর্ণ করি। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাতে [২] পূর্ণ হয়। এবং মূসা তার ভাই হারূনকে বললেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আপনি আমার প্রতিনিধিত্ব করবেন, সংশোধন করবেন আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবেন না [৩]।
وَلَمَّا جَاءَ مُوسَىٰ لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْكَ ۚ قَالَ لَنْ تَرَانِي وَلَٰكِنِ انْظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي ۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًا ۚ فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ
আর মূসা যখন আমাদের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন [১], তখন তিনি বললেন, ‘হে আমার রব! আমাকে দর্শন দান করুন, আমি আপনাকে দেখব’। তিনি বললেন , ‘আপনি আমাকে দেখতে পাবেন না [২]। আপনি বরং পাহাড়ের দিকেই তাকিয়ে দেখুন [৩], সেটা যদি নিজের জায়গায় স্থির থাকে তবে আপনি আমাকে দেখতে পাবেন।’ যখন তাঁর রব পাহারে জৌতি প্রকাশ করলেন [৪] তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন [৫]। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন তখন বললেন, ‘মহিমাময় আপনি , আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার কাছে তাওবাহ্ করছি এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।’
قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالَاتِي وَبِكَلَامِي فَخُذْ مَا آتَيْتُكَ وَكُنْ مِنَ الشَّاكِرِينَ
তিনি বললেন, ‘হে মূসা! আমি আপনাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দিয়ে মানুষের উপর বেছে নিয়েছি; কাজেই আমি আপনাকে যা দিলাম তা গ্রহণ করুন এবং শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হোন।
وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ مِنْ بَعْدِهِ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَهُ خُوَارٌ ۚ أَلَمْ يَرَوْا أَنَّهُ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًا ۘ اتَّخَذُوهُ وَكَانُوا ظَالِمِينَ
আর মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুর তৈরী করল, একটা দেহ, যা 'হাম্বা’ শব্দ করত। তারা কি দেখল না যে, এটা তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা এটাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল এবং তারা ছিল যালেম [১]।
وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰ إِلَىٰ قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِي مِنْ بَعْدِي ۖ أَعَجِلْتُمْ أَمْرَ رَبِّكُمْ ۖ وَأَلْقَى الْأَلْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُ إِلَيْهِ ۚ قَالَ ابْنَ أُمَّ إِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُونِي وَكَادُوا يَقْتُلُونَنِي فَلَا تُشْمِتْ بِيَ الْأَعْدَاءَ وَلَا تَجْعَلْنِي مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
আর মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন তখন বললেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ! তোমাদের রবের আদেশের আগেই তোমরা তাড়াহুড়ো করলে? এবং তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন [১] আর তার ভাইকে চুলে ধরে নিজের দিকে টেনে আনতে লাগলেন। হারূন বললেন, ‘হে আমার সহোদর! লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করেছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যা করেই ফেলেছিল। সুতরাং তুমি আমার সাথে এমন করবে না যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত মনে করবে না।’
وَلَمَّا سَكَتَ عَنْ مُوسَى الْغَضَبُ أَخَذَ الْأَلْوَاحَ ۖ وَفِي نُسْخَتِهَا هُدًى وَرَحْمَةٌ لِلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ
আর মূসার রাগ যখন প্রশমিত হল , তখন তিনি ফলকগুলো তুলে নিলেন। যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য সে কপিগুলোতে [১] যা লিখিত ছিল তাতে ছিলো হিদায়াত ও রহমত।
وَاخْتَارَ مُوسَىٰ قَوْمَهُ سَبْعِينَ رَجُلًا لِمِيقَاتِنَا ۖ فَلَمَّا أَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ قَالَ رَبِّ لَوْ شِئْتَ أَهْلَكْتَهُمْ مِنْ قَبْلُ وَإِيَّايَ ۖ أَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَهَاءُ مِنَّا ۖ إِنْ هِيَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَنْ تَشَاءُ وَتَهْدِي مَنْ تَشَاءُ ۖ أَنْتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۖ وَأَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ
আর মূসা তার সম্প্রদায় থেকে সত্তর জন লোককে আমাদের নির্ধারিত স্থানে একত্র হওয়ার জন্য মনোনীত করলেন।অতঃপর তারা যখন ভুমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো , তখন মূসা বললেন, ‘হে আমার রব! আপনি ইচ্ছে করলে আগেই তো এদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতেন! আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ, তারা যা করেছে সে জন্য কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটা তো শুধো আপনার পরীক্ষা, যা দ্বারা আপনি যাকে ইচ্ছে বিপদ্গামী করেন এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত করেন। আপনিই তো আমাদের অভিভাবক; কাজেই আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আর ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই তো শ্রেষ্ঠ।’
وَمِنْ قَوْمِ مُوسَىٰ أُمَّةٌ يَهْدُونَ بِالْحَقِّ وَبِهِ يَعْدِلُونَ
আর মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন দল রয়েছে যারা অন্যকে ন্যায়ভাবে পথ দেখায় ও সে অনুযায়ীই (বিচারে) ইনসাফ করে [১]।
وَقَطَّعْنَاهُمُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًا ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ إِذِ اسْتَسْقَاهُ قَوْمُهُ أَنِ اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْحَجَرَ ۖ فَانْبَجَسَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَشْرَبَهُمْ ۚ وَظَلَّلْنَا عَلَيْهِمُ الْغَمَامَ وَأَنْزَلْنَا عَلَيْهِمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَٰكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
আর তাদেরকে আমরা বারটি গোত্রে বিভক্ত করেছি। আর মূসার সম্প্রদায় যখন তার কাছে পানি চাইল, তখন আমরা তার প্রতি ওহী পাঠালাম, ‘আপনার লাঠির দ্বারা পাথরে আঘাত করুন’ ; ফলে তা থেকে বারটি ঝর্ণা ধারা উৎসারিত হল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানস্থান চিনে নিল। আর আমরা মেঘ দ্বারা তাদের উপর ছায়া দান করেছিলাম এবং তাদের উপর আমরা মান্না ও সালওয়া নাযিল করেছিলাম। (বলেছিলাম) ‘তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু খাও।’আর তারা আমাদের প্রতি কোন যুলুম করেনি, ররং তারা নিজেদের উপরই যুলুম করত।
ثُمَّ بَعَثْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ مُوسَىٰ وَهَارُونَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ بِآيَاتِنَا فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُجْرِمِينَ
তারপর আমরা আমাদের নিদর্শনসহ মূসা ও হারূনকে ফির’আউন ও তার সভাষদদের কাছে পাঠাই। কিন্তু তারা অহংকার করে [১] এবং তারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায় [২]।
قَالَ مُوسَىٰ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَكُمْ ۖ أَسِحْرٌ هَٰذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ
মূসা বললেন, ‘সত্য যখন তোমাদের কাছে আসল তখন তা সম্পর্কে তোমরা এরূপ বলছ? এটা কি জাদু? অথচ জাদুকরেরা সফলকাম হয় না [১]।’
فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ
অতঃপর যখন জাদুকরেরা আসল তখন তাদেরকে মূসা বললেন, ‘তোমাদের যা নিক্ষেপ করার, নিক্ষেপ কর।’
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ
অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, তখন মূসা বললেন, ‘তোমরা যা এনেছ তা জাদু, নিশ্চয় আল্লাহ্ সেগুলোকে অসার করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কাজ সার্থক করেন না।’
فَمَا آمَنَ لِمُوسَىٰ إِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِنْ قَوْمِهِ عَلَىٰ خَوْفٍ مِنْ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ أَنْ يَفْتِنَهُمْ ۚ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ
কিন্তু ফির’আউন এবং তার পরিষদবর্গ নির্যাতন করবে এ আশংকায় মূসার সম্প্রদায়ের এক ছোট্ট নওজোয়ান দল [১] ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঈমান আনেনি। আর নিশ্চয় ফির’আউন ছিল যমীনে পরাক্রমশীল এবং সে নিশ্চয় ছিল সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত [২]।
وَقَالَ مُوسَىٰ يَا قَوْمِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ
আর মূসা বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায় ! যদি তোমরা আল্লাহ্র উপর ঈমান এনে থাক, তবে তোমরা তাঁরই উপর নির্ভর কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক [১]।
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَنْ تَبَوَّآ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
আর আমরা মূসা ও তার ভাইকে ওহী পাঠালাম যে, ‘মিসরে আপনাদের সম্প্রদায়ের জন্য ঘর তৈরী করুন এবং তোমাদের ঘরগুলোকে ‘কিবলা [১] তথা ইবাদাতের ঘর বানান, আর সালাত কায়েম করুন এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন [২]। ’
وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِكَ ۖ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَىٰ أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
মূসা বললেন, ‘হে আমাদের রব ! আপনি তো ফির’আউন ও তার পরিষদবর্গকে দুনিয়ার জীবনে শোভা ও সম্পদ [১] দান করেছেন, হে আমাদের রব! যা দ্বারা তারা মানুষকে আপনার পথ থেকে ভ্রষ্ট করে [২]। হে আমাদের রব! তাদের সম্পদ বিনষ্ট করুন, আর তাদের হৃদয় কঠিন করে দিন, ফলে তারা যন্ত্রনণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনবে না [৩]।’
أَفَمَنْ كَانَ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّهِ وَيَتْلُوهُ شَاهِدٌ مِنْهُ وَمِنْ قَبْلِهِ كِتَابُ مُوسَىٰ إِمَامًا وَرَحْمَةً ۚ أُولَٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۚ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الْأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ ۚ فَلَا تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِنْهُ ۚ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ
তারা [১] কি তার সমতুল্য যে তার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত [২] এবং যারা অনুসরণ করে তাঁর প্রেরিত সাক্ষী [৩] এবং যার আগে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ? তারাই এটাতে [৪] ঈমান রাখে। অন্যান্য দলের যারা তাতে [৫] কুফরী করে, আগুনই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান [৬]। কাজেই আপনি এতে [৭] সন্দ্বিগ্ন হবেন না। এটা তো আপনার রবের প্রেরিত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না [৮]।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ
আর অবশ্যই আমারা মূসাকে আমাদের নির্দেশনাবলি ও প্রমাণসহ পাঠিয়েছিলাম,
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَاخْتُلِفَ فِيهِ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ
আর অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর এতে মতভেদ ঘটেছিল। আর আপনার রবের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের মিমাংসা তো হয়েই যেত [১]। আর নিশ্চয় তারা এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিপতিত [২]।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
আর অবশ্যই আমরা মূসাকে আমাদের নিদর্শনসহ পাঠিয়েছিলাম [১] এবং বলেছিলাম, ‘আপনার সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসুন [২], এবং তাদেরকে আল্লাহ্র দিনগুলোর দ্বারা উপদেশ দিন [৩]।’ এতে তো নিদর্শন [৪] রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্য্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য [৫]।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ أَنْجَاكُمْ مِنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ وَيُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُمْ بَلَاءٌ مِنْ رَبِّكُمْ عَظِيمٌ
আর স্মরণ করুন, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমাদের উপর আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর [১] যখন তিনি তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন ফির’আউন গোষ্ঠীদের কবল হতে, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ্ করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; আর এতে ছিল তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা [২]।’
وَقَالَ مُوسَىٰ إِنْ تَكْفُرُوا أَنْتُمْ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ
আর মূসা বলেছিলেন, ‘তোমরা এবং যমীনের সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তারপরও আল্লাহ্ অভাবমুক্ত ও সর্বপ্রশংসিত [১]।
وَآتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِبَنِي إِسْرَائِيلَ أَلَّا تَتَّخِذُوا مِنْ دُونِي وَكِيلًا
আর আমরা মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও তাকে করেছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশক [১], যাতে 'তোমরা আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কর্মবিধায়করুপে গ্রহণ না করো [২]
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَىٰ تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ ۖ فَاسْأَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ إِذْ جَاءَهُمْ فَقَالَ لَهُ فِرْعَوْنُ إِنِّي لَأَظُنُّكَ يَا مُوسَىٰ مَسْحُورًا
আর আমরা মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম [১]; সুতরাং আপনি বনী ইসরাইলকে জিজ্ঞেস করে দেখুন; যখন তিনি তাদের কাছে এসেছিলেন, অতঃপর ফির’আউন তাঁকে বলেছিল, ‘হে মূসা! আমি মনে করি নিশ্চয় তুমি জাদুগ্রস্ত।’
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتَّىٰ أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا
আর স্মরণ করুন, যখন মূসা তার সঙ্গী যুবককে [১] বলেছিলেন, দু’সাগরের মিলনস্থল না পৌছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব [২]।
قَالَ لَهُ مُوسَىٰ هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰ أَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
মূসা তাকে বললেন, ‘যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন, যা দ্বারা আমি সঠিক পথ পাব, এ শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি [১]?
قَالَ إِنْ سَأَلْتُكَ عَنْ شَيْءٍ بَعْدَهَا فَلَا تُصَاحِبْنِي ۖ قَدْ بَلَغْتَ مِنْ لَدُنِّي عُذْرًا
মূসা বললেন, ‘এর পর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি তবে আপনি আমাকে সংগে রাখবেন না; আমার ‘ওযর-আপত্তির’ চূড়ান্ত হয়েছে।
فَانْطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنْقَضَّ فَأَقَامَهُ ۖ قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا
অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল; চলতে চলতে তারা এক জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে তাদের কাছে খাদ্য চাইল [১]; কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অতঃপর সেখানে তারা এক প্রাচীর দেখতে পেল, যা পরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন সে সেটাকে সুদৃঢ় করে দিলো। মূসা বললেন, ‘আপনি তো ইচ্ছে করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।’
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مُوسَىٰ ۚ إِنَّهُ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا
আর স্মরণ করুন এ কিতাবে মূসাকে , তিনি ছিলেন বিশেষ মনোনীত [১] এবং তিনি ছিলেন রাসুল, নবী।
وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ مُوسَىٰ
আর মূসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌঁছেছে কি? [১]
فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ يَا مُوسَىٰ
তারপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন তাকে ডেকে বলা হল , ‘হে মূসা !
وَمَا تِلْكَ بِيَمِينِكَ يَا مُوسَىٰ
আর হে মুসা ! আপনার ডান হাতে সেটা কি [১]?’
قَالَ أَلْقِهَا يَا مُوسَىٰ
আল্লাহ্ বলেন , ‘হে মুসা! আপনি তা নিক্ষেপ করুন।’
قَالَ قَدْ أُوتِيتَ سُؤْلَكَ يَا مُوسَىٰ
তিনি বললেন, ‘হে মূসা ! আপনি যা চেয়েছেন তা আপনাকে দেয়া হল [১]।
إِذْ تَمْشِي أُخْتُكَ فَتَقُولُ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ مَنْ يَكْفُلُهُ ۖ فَرَجَعْنَاكَ إِلَىٰ أُمِّكَ كَيْ تَقَرَّ عَيْنُهَا وَلَا تَحْزَنَ ۚ وَقَتَلْتَ نَفْسًا فَنَجَّيْنَاكَ مِنَ الْغَمِّ وَفَتَنَّاكَ فُتُونًا ۚ فَلَبِثْتَ سِنِينَ فِي أَهْلِ مَدْيَنَ ثُمَّ جِئْتَ عَلَىٰ قَدَرٍ يَا مُوسَىٰ
‘যখন আপনার বোন চলছিল, অতঃপর সে গিয়ে বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একজনের সন্ধান দেব যে এ শিশুর দায়িত্বভার নিতে পারবে? অতঃপর আমরা আপনাকে আপনার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়; আর আপনি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন; অতঃপর আমরা আপনাকে মনঃকষ্ট থেকে মুক্তি দেই এবং আমরা আপনাকে বহু পরীক্ষা করেছি [১]। হে মূসা! তারপর আপনি কয়েক বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছিলেন, এর পরে আপনি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন।
قَالَ فَمَنْ رَبُّكُمَا يَا مُوسَىٰ
ফির’আউন বলল, ‘হে মূসা! তাহলে কে তোমাদের রব [১]?’
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ
মূসা বললেন, ‘আমাদের রব তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার সৃষ্টি আকৃতি দান করেছেন, তারপর পথনির্দেশ করেছেন [১]।
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي فِي كِتَابٍ ۖ لَا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنْسَى
মূসা বললেন, ‘এর জ্ঞান আমার রব এর নিকট কিতাবে রয়েছে, আমার রব ভুল করেন না এবং বিস্মৃতও হন না [১]
قَالَ أَجِئْتَنَا لِتُخْرِجَنَا مِنْ أَرْضِنَا بِسِحْرِكَ يَا مُوسَىٰ
সে বলল, হে মূসা! তুমি কি আমাদের কাছে এসেছ তোমার জাদু দ্বারা আমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করে দেয়ার জন্য [১]?
قَالَ مَوْعِدُكُمْ يَوْمُ الزِّينَةِ وَأَنْ يُحْشَرَ النَّاسُ ضُحًى
মূসা বললেন, ‘তোমাদের নির্ধারিত সময় হল উৎসবের দিন এবং যাতে সকালেই জনগণকে সমবেত করা হয় [১]
قَالَ لَهُمْ مُوسَىٰ وَيْلَكُمْ لَا تَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرَىٰ
মূসা তাদেরকে বলল, ‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করো না। করলে, তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমুলে ধ্বংস করবেন। আর যে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে সেই ব্যর্থ হয়েছে। [১]
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَىٰ
তারা বলল, ‘হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর নতুবা আমরাই প্রথম নিক্ষেপকারী হই। [১]
قَالَ بَلْ أَلْقُوا ۖ فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَىٰ
মূসা বললেন, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। অতঃপর তাদের জাদু-প্রভাবে হঠাৎ মূসার মনে হল তাদের দড়ি ও লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে [১]।
فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَىٰ
তখন মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলেন [১]।
فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ هَارُونَ وَمُوسَىٰ
অতঃপর জাদুকরেরা সিজদাবনত হও [১], তার বলল , ‘আমরা হারুন ও মূসার রব এর প্রতি ঈমান আনলাম।
وَلَقَدْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي فَاضْرِبْ لَهُمْ طَرِيقًا فِي الْبَحْرِ يَبَسًا لَا تَخَافُ دَرَكًا وَلَا تَخْشَىٰ
আর আমরা অবশ্যই মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম এ মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হন সুতরাং আপনি তাদের জন্য সাগরের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথের ব্যবস্থা করুন, পিছন থেকে এসে ধরে ফেলার আশংকা করবেন না এবং ভয়ও করবেন না [১]।
وَمَا أَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ يَا مُوسَىٰ
হে মূসা! আপনার সম্প্রদায়কে পিছনে ফেলে আপনাকে তাড়াহুড়া করতে বাধ্য করল কে?
قَالَ هُمْ أُولَاءِ عَلَىٰ أَثَرِي وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ
তিনি বললেন, তারা তো আমার পিছনেই আছে [১]। আর হে আমার রব! আমি তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসলাম, আপনি সন্তুষ্ট হবেন এ জন্য।
فَرَجَعَ مُوسَىٰ إِلَىٰ قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًا ۚ أَفَطَالَ عَلَيْكُمُ الْعَهْدُ أَمْ أَرَدْتُمْ أَنْ يَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌ مِنْ رَبِّكُمْ فَأَخْلَفْتُمْ مَوْعِدِي
অতঃপর মূসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেলেন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে [১]। তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের রব কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি [২]? তবে কি প্রতিশ্রুতি কাল তোমাদের কাছে সুদীর্ঘ হয়েছে [৩]? না তোমরা চেয়েছ তোমাদের প্রতি আপতিত হোক তোমাদের রব এর ক্রোধ [৪], যে কারণে তোমরা আমাকে দেয়া অঙ্গীকার [৫] ভঙ্গ করলে?
فَأَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَهُ خُوَارٌ فَقَالُوا هَٰذَا إِلَٰهُكُمْ وَإِلَٰهُ مُوسَىٰ فَنَسِيَ
‘অতঃপর সে তাদের জন্য গড়লো এক বাছুর, এক অবয়বম যা হাম্বা রব করত। তখন তারা বলল, এ তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, অতঃপর সে (মূসা) ভুলে গেছে। [১]
قَالُوا لَنْ نَبْرَحَ عَلَيْهِ عَاكِفِينَ حَتَّىٰ يَرْجِعَ إِلَيْنَا مُوسَىٰ
তারা বলেছিল, ‘আমাদের কাছে মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা কিছুতেই এর পূজা হতে বিরত হব না।
قَالَ يَا هَارُونُ مَا مَنَعَكَ إِذْ رَأَيْتَهُمْ ضَلُّوا
মূসা বললেন, ‘হে হারুন! আপনি যখন দেখলেন তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে আপনাকে বাধা দিল---
قَالَ فَمَا خَطْبُكَ يَا سَامِرِيُّ
মূসা বললেন, ‘হে সামেরী! তোমার ব্যাপার কি?
قَالَ فَاذْهَبْ فَإِنَّ لَكَ فِي الْحَيَاةِ أَنْ تَقُولَ لَا مِسَاسَ ۖ وَإِنَّ لَكَ مَوْعِدًا لَنْ تُخْلَفَهُ ۖ وَانْظُرْ إِلَىٰ إِلَٰهِكَ الَّذِي ظَلْتَ عَلَيْهِ عَاكِفًا ۖ لَنُحَرِّقَنَّهُ ثُمَّ لَنَنْسِفَنَّهُ فِي الْيَمِّ نَسْفًا
মূসা বললেন, ‘যাও; তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য এটাই রইলো যে, তুমি বলবে, ‘আমি অস্পৃশ্য [১] এবং তোমার জন্য রইল এক নির্দিষ্ট সময়, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না। আর তুমি তোমার সে ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পুজায় তুমি রত ছিলে; আমরা সেটাকে জ্বালিয়ে দেবই, তারপর সেটাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে ছড়িয়ে দেবই।
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَىٰ وَهَارُونَ الْفُرْقَانَ وَضِيَاءً وَذِكْرًا لِلْمُتَّقِينَ
আর অবশ্যই আমরা দিয়েছিলাম [১] মূসা ও হারুনকে ‘ফুরকান’ জ্যোতি ও উপদেশ মুত্তাকিদের জন্য [২]---
وَأَصْحَابُ مَدْيَنَ ۖ وَكُذِّبَ مُوسَىٰ فَأَمْلَيْتُ لِلْكَافِرِينَ ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ
আর মাদইয়ানবাসীরা; অনুরূপভাবে মিথ্যারোপ করা হয়েছিল মূসার প্রতিও। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে অবকাশ দিয়েছিলাম, তারপর আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম। অতএব (প্রত্যক্ষ করুন) আমার প্রত্যাখ্যান (শাস্তি) কেমন ছিল [১]!
ثُمَّ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ وَأَخَاهُ هَارُونَ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ
তারপর আমরা আমাদের নিদর্শনসমূহ এবং সুস্পষ্ট প্রমাণসহ মূসা ও তার ভাই হারূনকে পাঠালাম [১],
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ
আর আমরা তো মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব; যাতে তারা হেদায়েত পায়।
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَا مَعَهُ أَخَاهُ هَارُونَ وَزِيرًا
আর আমরা তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তার সাথে তার ভাই হারূনকে সাহায্যকারী করেছিলাম,
وَإِذْ نَادَىٰ رَبُّكَ مُوسَىٰ أَنِ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব মূসাকে ডেকে বললেন, ‘আপনি যালিম সম্পপ্রদায়ের কাছে যান,
قَالَ رَبِّ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُكَذِّبُونِ
মূসা বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! আমি আশংকা করছি যে, তারা আমার উপর মিথ্যারোপ করবে,
قَالَ فَعَلْتُهَا إِذًا وَأَنَا مِنَ الضَّالِّينَ
মূসা বললেন, ‘আমি তো এটা করেছিলাম তখন, যখন আমি ছিলাম বিভ্ৰান্ত’ [২]।
قَالَ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِنْ كُنْتُمْ مُوقِنِينَ
মূসা বললেন, ‘তিনি আসমানসমূহ ও যমীন এবং তাদের মধ্যবর্তী সব কিছুর রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।’
قَالَ رَبُّكُمْ وَرَبُّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ
মূসা বললেন, ‘তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও রব।’
قَالَ رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ
মূসা বললেন, ‘তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং তাদের মধ্যবর্তী সব কিছুর রব; যদি তোমরা বুঝে থাক!’
قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكَ بِشَيْءٍ مُبِينٍ
মূসা বললেন, ‘আমি যদি তোমার কাছে কোন স্পষ্ট বিষয় নিয়ে আসি, তবুও [১]?’
قَالَ لَهُمْ مُوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ
মূসা তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা যা নিক্ষেপ করার তা নিক্ষেপ কর।’
فَأَلْقَىٰ مُوسَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ
অতঃপর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলেন, সহসা সেটা তাদের অলীক কীর্তিগুলোকে গ্ৰাস করতে লাগল।
رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
‘যিনি মূসা ও হারূনেরও রব।’
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي إِنَّكُمْ مُتَّبَعُونَ
আর আমরা মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম এ মর্মে যে, ‘আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হউন [১], অবশ্যই তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।’
فَلَمَّا تَرَاءَى الْجَمْعَانِ قَالَ أَصْحَابُ مُوسَىٰ إِنَّا لَمُدْرَكُونَ
অতঃপর যখন দু‘দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, ‘আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম!’
قَالَ كَلَّا ۖ إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ
মূসা বললেন, ‘কখনই নয়! আমার সঙ্গে আছেন আমার রব [১]; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন।’
فَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنِ اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ ۖ فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ
অতঃপর আমরা মূসার প্রতি ওহী করলাম যে, আপনার লাঠি দ্বারা সাগরে আঘাত করুন। ফলে তা বিভক্ত প্ৰত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতের মত হয়ে গেল [১];
وَأَنْجَيْنَا مُوسَىٰ وَمَنْ مَعَهُ أَجْمَعِينَ
এবং আমরা উদ্ধার করলাম মূসা ও তার সঙ্গী সকলকে,
إِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِأَهْلِهِ إِنِّي آنَسْتُ نَارًا سَآتِيكُمْ مِنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ آتِيكُمْ بِشِهَابٍ قَبَسٍ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ
স্মরণ করুন, যখন মূসা তার পরিবারের লোকদেরকে বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় আমি আগুন দেখেছি, অচিরেই আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য কোন খবর আনব অথবা তোমাদের জন্য আনব জলন্ত অঙ্গার, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার [১]।’
يَا مُوسَىٰ إِنَّهُ أَنَا اللَّهُ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘হে মূসা! নিশ্চয় আমি আল্লাহ্ [১]! পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়,
وَأَلْقِ عَصَاكَ ۚ فَلَمَّا رَآهَا تَهْتَزُّ كَأَنَّهَا جَانٌّ وَلَّىٰ مُدْبِرًا وَلَمْ يُعَقِّبْ ۚ يَا مُوسَىٰ لَا تَخَفْ إِنِّي لَا يَخَافُ لَدَيَّ الْمُرْسَلُونَ
‘আর আপনি আপনার লাঠি নিক্ষেপ করুন।’ তারপর যখন তিনি সেটাকে সাপের মত ছুটোছুটি করতে দেখলেন তখন তিনি পিছনের দিকে ছুটতে লাগলেন [১] এবং ফিরেও তাকালেন না। ‘হে মূসা! ভীত হবেন না, নিশ্চয় আমি এমন যে, আমার সান্নিধ্যে রাসূলগণ ভয় পায় না [২];
نَتْلُو عَلَيْكَ مِنْ نَبَإِ مُوسَىٰ وَفِرْعَوْنَ بِالْحَقِّ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
আমরা আপনার কাছে মূসা ও ফির‘আউনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বিবৃত করছি [১], এমন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে যারা ঈমান আনে [২]।
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ ۖ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي ۖ إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ
আর মূসা-জননীর প্রতি আমরা নির্দেশ দিলাম [১], ‘তাকে দুধ পান করাও। যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশংকা করবে, তখন একে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো এবং ভয় করো না, পেরেশানও হয়ো না। আমরা অবশ্যই একে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং একে রাসূলদের একজন করব।’
وَأَصْبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوسَىٰ فَارِغًا ۖ إِنْ كَادَتْ لَتُبْدِي بِهِ لَوْلَا أَنْ رَبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا لِتَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
আর মূসা-জননীর হৃদয় অস্থির হয়ে পড়েছিল। যাতে সে আস্থাশীল হয় সে জন্য আমরা তার হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিলে সে তার পরিচয় তো প্ৰকাশ করেই দিত।
وَقَالَتْ لِأُخْتِهِ قُصِّيهِ ۖ فَبَصُرَتْ بِهِ عَنْ جُنُبٍ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
আর সে মূসার বোনকে বলল, ‘এর পিছনে পিছনে যাও।’ সে দূর থেকে তাকে দেখছিল অথচ তারা তা উপলব্ধি করতে পারছিল না।
وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ مِنْ قَبْلُ فَقَالَتْ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ أَهْلِ بَيْتٍ يَكْفُلُونَهُ لَكُمْ وَهُمْ لَهُ نَاصِحُونَ
আর পূর্ব থেকেই আমরা ধাত্রী-স্তন্যপানে তাকে বিরত রেখেছিলাম। অতঃপর মূসার বোন বলল, ‘তোমাদেরকে কি আমি এমন এক পরিবারের সন্ধান দেব, যারা তোমাদের হয়ে একে লালন-পালন করবে এবং এর মঙ্গলকামী হবে?’
وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَاسْتَوَىٰ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
আর যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে উপনীত ও পরিণত বয়স্ক হল [১] তখন আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম [২]; আর এভাবেই আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কার প্রদান করে থাকি।
وَدَخَلَ الْمَدِينَةَ عَلَىٰ حِينِ غَفْلَةٍ مِنْ أَهْلِهَا فَوَجَدَ فِيهَا رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِ هَٰذَا مِنْ شِيعَتِهِ وَهَٰذَا مِنْ عَدُوِّهِ ۖ فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِي مِنْ شِيعَتِهِ عَلَى الَّذِي مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوسَىٰ فَقَضَىٰ عَلَيْهِ ۖ قَالَ هَٰذَا مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّهُ عَدُوٌّ مُضِلٌّ مُبِينٌ
আর তিনি নগরীতে প্রবেশ করলেন, যখন এর অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক [১]। সেখানে তিনি দুটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখলেন, একজন তার নিজ দলের এবং অন্যজন তার শক্রদলের। অতঃপর মূসার দলের লোকটি ওর শত্রুর বিরুদ্ধে তার সাহায্য প্রার্থনা করল, তখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন [২]; এভাবে তিনি তাকে হত্যা করে বসলেন। মূসা বললেন, ‘এটা শয়তানের কাণ্ড [৩]। সে তো প্ৰকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।’
قَالَ رَبِّ بِمَا أَنْعَمْتَ عَلَيَّ فَلَنْ أَكُونَ ظَهِيرًا لِلْمُجْرِمِينَ
তিনি বললেন, ‘হে আমার রব! আপনি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না [১]।’
فَأَصْبَحَ فِي الْمَدِينَةِ خَائِفًا يَتَرَقَّبُ فَإِذَا الَّذِي اسْتَنْصَرَهُ بِالْأَمْسِ يَسْتَصْرِخُهُ ۚ قَالَ لَهُ مُوسَىٰ إِنَّكَ لَغَوِيٌّ مُبِينٌ
অতঃপর ভীত সতর্ক অবস্থায় সে নগরীতে তার ভোর হল। হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন আগের দিন যে ব্যাক্তি গতকাল তার কাছে সাহায্য চেয়েছিল, সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। মূসা তাকে বললেন, ‘তুমি তো স্পষ্টই একজন বিভ্ৰান্ত ব্যাক্তি [১]।’
فَلَمَّا أَنْ أَرَادَ أَنْ يَبْطِشَ بِالَّذِي هُوَ عَدُوٌّ لَهُمَا قَالَ يَا مُوسَىٰ أَتُرِيدُ أَنْ تَقْتُلَنِي كَمَا قَتَلْتَ نَفْسًا بِالْأَمْسِ ۖ إِنْ تُرِيدُ إِلَّا أَنْ تَكُونَ جَبَّارًا فِي الْأَرْضِ وَمَا تُرِيدُ أَنْ تَكُونَ مِنَ الْمُصْلِحِينَ
অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শক্রকে ধরতে উদ্যত হলেন, তখন সে ব্যাক্তি বলে উঠল [১], ‘হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যাক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাচ্ছ? তুমি তো যমীনের বুকে স্বেচ্ছাচারী হতে চাচ্ছ, তুমি তো চাও না শান্তি স্থাপনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে!’
وَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنَّ الْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ فَاخْرُجْ إِنِّي لَكَ مِنَ النَّاصِحِينَ
আর নগরীর দূর প্রান্ত থেকে ব্যাক্তি ছুটে এসে বলল, ‘হে মূসা! পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ করছে [১]। কাজেই তুমি বাইরে চলে যাও, আমি তো তোমার কল্যাণকামী।’
وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَاءَ مَدْيَنَ قَالَ عَسَىٰ رَبِّي أَنْ يَهْدِيَنِي سَوَاءَ السَّبِيلِ
আর যখন মূসা মাদ্ইয়ান [১] অভিমুখে যাত্রা করলেন তখন বললেন, ‘আশা করি আমার রব আমাকে সরল পথ দেখাবেন [২]।’
فَسَقَىٰ لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّىٰ إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
মুসা তখন তাদের পক্ষে জানোয়ারগুলোকে পানি পান করালেন। তারপর তিনি ছায়ার নীচে আশ্রয় গ্রহন করে বললেন, ‘হে আমার রব ! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন আমি তার কাঙ্গাল [১]।’
فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ لِيَجْزِيَكَ أَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا ۚ فَلَمَّا جَاءَهُ وَقَصَّ عَلَيْهِ الْقَصَصَ قَالَ لَا تَخَفْ ۖ نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
তখন নারী দুজনের একজন শরম-জড়িত পায়ে তার কাছে আসল [১] এবং বলল, ‘আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য।’ অতঃপর মূসা তার কাছে এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে তিনি বললেন, ‘ভয় করো না, তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে বেঁচে গেছ।’
قَالَ ذَٰلِكَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ ۖ أَيَّمَا الْأَجَلَيْنِ قَضَيْتُ فَلَا عُدْوَانَ عَلَيَّ ۖ وَاللَّهُ عَلَىٰ مَا نَقُولُ وَكِيلٌ
মূসা বললেন, ‘আমার ও আপনার মধ্যে এ চুক্তিই রইল। এ দুটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ্ তার কর্মবিধায়ক।’
فَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ وَسَارَ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِنْ جَانِبِ الطُّورِ نَارًا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا لَعَلِّي آتِيكُمْ مِنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ جَذْوَةٍ مِنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ
অতঃপর মূসা যখন তার মেয়াদ পূর্ণ করার পর [১] সপরিবারে যাত্রা করলেন [২] তখন তিনি তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখতে পেলেন। তিনি তার পরিজনবৰ্গকে বললেন, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবত আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য খবর আনতে পারি অথবা একখণ্ড জ্বলন্ত কাঠ আনতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।’
فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ مِنْ شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ أَنْ يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
অতঃপর যখন মূসা আগুনের কাছে পৌঁছলেন তখন উপত্যকার ডান পাশে [১] বরকতময় [২] ভূমির উপর অবস্থিত সুনির্দিষ্ট গাছের দিক থেকে তাকে ডেকে বলা হল, ‘হে মূসা! আমিই আল্লাহ্, সৃষ্টিকুলের রব [৩];’
وَأَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَلَمَّا رَآهَا تَهْتَزُّ كَأَنَّهَا جَانٌّ وَلَّىٰ مُدْبِرًا وَلَمْ يُعَقِّبْ ۚ يَا مُوسَىٰ أَقْبِلْ وَلَا تَخَفْ ۖ إِنَّكَ مِنَ الْآمِنِينَ
আরও বলা হল, ‘আপনি আপনার লাঠি নিক্ষেপ করুন।’ তারপর, তিনি যখন সেটাকে সাপের ন্যায় ছুটোছুটি করতে দেখলেন তখন পিছনের দিকে ছুটতে লাগলেন এবং ফিরে তাকালেন না। তাকে বলা হল, ‘হে মূসা ! সামনে আসুন, ভয় করবেন না; আপনি তো নিরাপদ।
قَالَ رَبِّ إِنِّي قَتَلْتُ مِنْهُمْ نَفْسًا فَأَخَافُ أَنْ يَقْتُلُونِ
মূসা বললেন, ‘হে আমার রব ! আমি তো তাদের একজনকে হত্যা করেছি। ফলে আমি আশংকা করছি তারা আমাকে হত্যা করবে [১]।
فَلَمَّا جَاءَهُمْ مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا بَيِّنَاتٍ قَالُوا مَا هَٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُفْتَرًى وَمَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ
অতঃপর মূসা যখন তাদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসল, তারা বলল, ‘এটা তো অলীক জাদু মাত্ৰ [১] ! আর আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে কখনো এরূপ কথা শুনিনি [২]।’
وَقَالَ مُوسَىٰ رَبِّي أَعْلَمُ بِمَنْ جَاءَ بِالْهُدَىٰ مِنْ عِنْدِهِ وَمَنْ تَكُونُ لَهُ عَاقِبَةُ الدَّارِ ۖ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
আর মূসা বললেন, ‘আমার রব সম্যক অবগত, কে তাঁর কাছ থেকে পথনির্দেশ এনেছে এবং আখেরাতে কার পরিণাম শুভ হবে। যালিমরা তো কখনো সফলকাম হবে না [১]।’
وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرِي فَأَوْقِدْ لِي يَا هَامَانُ عَلَى الطِّينِ فَاجْعَلْ لِي صَرْحًا لَعَلِّي أَطَّلِعُ إِلَىٰ إِلَٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّي لَأَظُنُّهُ مِنَ الْكَاذِبِينَ
আর ফির‘আউন বলল, ‘হে পরিষদবর্গ ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ আছে বলে জানি না ! অতএব হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর; হয়ত আমি সেটাতে উঠে মূসার ইলাহকে দেখতে পারি। আর আমি তো মনে করি, সে অবশ্যই মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।’
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ مِنْ بَعْدِ مَا أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ الْأُولَىٰ بَصَائِرَ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
আর অবশ্যই পূর্ববর্তী বহু প্ৰজন্মকে বিনাশ করার পর [১] আমরা মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, মানবজাতির জন্য জ্ঞান-বর্তিকা; পথনির্দেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ; যাতে তারা উপদেশ গ্ৰহণ করে।
وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ إِذْ قَضَيْنَا إِلَىٰ مُوسَى الْأَمْرَ وَمَا كُنْتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ
আর মূসাকে যখন আমরা বিধান দিয়েছিলাম তখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন না [১] এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীদেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
وَمَا كُنْتَ بِجَانِبِ الطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا وَلَٰكِنْ رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَا أَتَاهُمْ مِنْ نَذِيرٍ مِنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
আর মূসাকে যখন আমরা ডেকেছিলাম তখনও আপুনি তূর পর্বতের পাশে উপস্থিত ছিলেন না [১]। বস্তুত এটা আপনার রব-এর কাছ থেকে দয়াস্বরূপ, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারেন, যাদের কাছে আপনার আগে কোন সতর্ককারী আসেনি [২], যেন তারা উপদেশ গ্ৰহণ করে
فَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِنْدِنَا قَالُوا لَوْلَا أُوتِيَ مِثْلَ مَا أُوتِيَ مُوسَىٰ ۚ أَوَلَمْ يَكْفُرُوا بِمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ مِنْ قَبْلُ ۖ قَالُوا سِحْرَانِ تَظَاهَرَا وَقَالُوا إِنَّا بِكُلٍّ كَافِرُونَ
অতঃপর যখন আমাদের কাছ থেকে তাদের কাছে সত্য আসল, তারা বলতে লাগল, ‘মূসাকে যেরূপ দেয়া হয়েছিল, তাকে সেরূপ দেয়া হল না কেন?’ কিন্তু আগে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছিল, ‘দু‘টিই জাদু, একে অন্যকে সমর্থন করে।’ এবং তারা বলেছিল, ‘আমরা সকলকেই প্রত্যাখ্যান করি।’
إِنَّ قَارُونَ كَانَ مِنْ قَوْمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيْهِمْ ۖ وَآتَيْنَاهُ مِنَ الْكُنُوزِ مَا إِنَّ مَفَاتِحَهُ لَتَنُوءُ بِالْعُصْبَةِ أُولِي الْقُوَّةِ إِذْ قَالَ لَهُ قَوْمُهُ لَا تَفْرَحْ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْفَرِحِينَ
নিশ্চয় কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। আর আমরা তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করুন, যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, ‘অহংকার করো না, নিশ্চয় আল্লাহ্ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
وَقَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ ۖ وَلَقَدْ جَاءَهُمْ مُوسَىٰ بِالْبَيِّنَاتِ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الْأَرْضِ وَمَا كَانُوا سَابِقِينَ
আর আমরা ধ্বংস করেছিলাম কারূন, ফিরআউন ও হামানকে। আর অবশ্যই মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিল; অতঃপর তারা যমীনে অহংকার করেছিল; কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি।
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُنْ فِي مِرْيَةٍ مِنْ لِقَائِهِ ۖ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِبَنِي إِسْرَائِيلَ
আর অবশ্যই আমরা মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতএব আপনি তার সাক্ষাত সম্বন্ধে সন্দেহে থাকবেন না [১] এবং আমরা ওটাকে করে দিয়েছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য হিদায়াতস্বরূপ।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۖ وَأَخَذْنَا مِنْهُمْ مِيثَاقًا غَلِيظًا
আর স্মরণ করুন, যখন আমরা নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করেছিলাম [১] এবং আপনার কাছ থেকেও, আর নূহ, ইব্রাহিম, মূসা, ও মারইয়াম পুত্র ঈসার কাছ থেকেও। আর আমরা তাদের কাছ থেকে গ্রহন করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার--
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ آذَوْا مُوسَىٰ فَبَرَّأَهُ اللَّهُ مِمَّا قَالُوا ۚ وَكَانَ عِنْدَ اللَّهِ وَجِيهًا
হে ঈমানদারগণ! মূসাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তোমরা তাদের মত হয়ো না; অতঃপর তারা যা রটনা করেছিল আল্লাহ তা থেকে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন [১]; আর তিনি ছিলেন আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান [২]।
وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
আর অবশ্যই আমরা অনুগ্রহ করেছিলাম মূসা ও হারূনের প্রতি,
سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
মূসা ও হারূনের প্রতি সালাম (শান্তি ও নিরাপত্তা)।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ
আর অবশ্যই আমরা আমাদের নিদর্শন ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করেছিলাম,
فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْحَقِّ مِنْ عِنْدِنَا قَالُوا اقْتُلُوا أَبْنَاءَ الَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ وَاسْتَحْيُوا نِسَاءَهُمْ ۚ وَمَا كَيْدُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ
অতঃপর মূসা আমাদের নিকট থেকে সত্য নিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হলে তারা বলল, ‘মূসার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদের পুত্ৰ সন্তানদেরকে হত্যা কর এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখ।' আর কাফিরদের ষড়যন্ত্র কেবল ব্যর্থই হবে।
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِي أَقْتُلْ مُوسَىٰ وَلْيَدْعُ رَبَّهُ ۖ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَنْ يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ
আর ফির'আউন বলল, 'আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার রবকে আহবান করুক। নিশ্চয় আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে যমীনে বিপর্যয় ছড়িয়ে দেবে।’
وَقَالَ مُوسَىٰ إِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ مِنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ
মূসা বললেন, 'আমি আমার রব ও তোমাদের রবের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন প্ৰত্যেক অহংকারী হতে যে বিচার দিনের উপর ঈমান রাখে না।’
أَسْبَابَ السَّمَاوَاتِ فَأَطَّلِعَ إِلَىٰ إِلَٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّي لَأَظُنُّهُ كَاذِبًا ۚ وَكَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِفِرْعَوْنَ سُوءُ عَمَلِهِ وَصُدَّ عَنِ السَّبِيلِ ۚ وَمَا كَيْدُ فِرْعَوْنَ إِلَّا فِي تَبَابٍ
‘আসমানে আরোহণের অবলম্বন, যেন দেখতে পাই মূসার ইলাহকে; আর নিশ্চয় আমি তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।' আর এভাবে ফির'আউনের কাছে শোভনীয় করা হয়েছিল তার মন্দ কাজকে এবং তাকে নিবৃত্ত করা হয়েছিল সরল পথ থেকে এবং ফির'আউনের ষড়যন্ত্র কেবল ব্যর্থই ছিল।
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْهُدَىٰ وَأَوْرَثْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ الْكِتَابَ
আর অবশ্যই আমরা মূসাকে দান করেছিলাম হেদায়াত এবং বনী ইসরাইলের উত্তরাধিকারী করেছিলাম কিতাবের,
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَاخْتُلِفَ فِيهِ ۗ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ
আর অবশ্যই আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর তাতে মতভেদ ঘটেছিল। আর যদি আপনার রবের পক্ষ থেকে একটি বাণী (সিদ্ধান্ত) পূর্বেই না থাকত তবে তাদের মধ্যে ফয়সালা হয়ে যেত। আর নিশ্চয় তারা এ কুরআন সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে।
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ يُنِيبُ
তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে, আর যা আমরা ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি কর না [১]। আপনি মুশরিকদেরকে যার প্রতি ডাকছেন তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে তার দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি দ্বীনের দিকে হেদায়াত করেন।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَقَالَ إِنِّي رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আর অবশ্যই মূসাকে আমরা আমাদের নিদর্শনাবলীসহ ফির’আউন ও তার নেতৃবর্গের নিকট পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় আমি সৃষ্টিকুলের রবের একজন রাসূল। ’
وَمِنْ قَبْلِهِ كِتَابُ مُوسَىٰ إِمَامًا وَرَحْمَةً ۚ وَهَٰذَا كِتَابٌ مُصَدِّقٌ لِسَانًا عَرَبِيًّا لِيُنْذِرَ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَبُشْرَىٰ لِلْمُحْسِنِينَ
আর এর আগে ছিল মূসার কিতাব পথ প্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ। আর এ কিতাব (তার) সত্যায়নকারী, আরবী ভাষায়, যেন তা যালিমদেরকে সতর্ক করে, আর তা মুহসিনদের জন্য সুসংবাদ [১]।
قَالُوا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنْزِلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٍ مُسْتَقِيمٍ
তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের সম্প্রদায় ! নিশ্চয় আমারা এমন এক কিতাবের পাঠ শুনেছি যা নাযিল হয়েছে মূসার পরে, এটা তার সম্মুখস্থ কিতাবকে সত্যায়ন করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে হেদায়াত করে।
وَفِي مُوسَىٰ إِذْ أَرْسَلْنَاهُ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ
আর নিদর্শন রেখেছি মূসার বৃত্তান্তেও, যখন আমরা তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফির’আউনের কাছে পাঠালাম [১],
أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَىٰ
নাকি তাকে জানানো হয়নি যা আছে মূসার সহীফায়,
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ لِمَ تُؤْذُونَنِي وَقَدْ تَعْلَمُونَ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ ۖ فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
আর স্মরণ করুন, যখন মূসা তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ অথচ তোমরা জান যে, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তারা যখন বাঁকা পথ অবলম্বন করল তখন আল্লাহ্ তাদের হৃদয়কে বাঁকা করে দিলেন। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ مُوسَىٰ
আপনার কাছে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি [১] ?
فَأَرَاهُ الْآيَةَ الْكُبْرَىٰ
অতঃপর তিনি তাকে মহানিদর্শন দেখালেন [১]।
صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ
ইব্রাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে [১]।